”শ্রমিক বান্ধব ব্লগ”

Bangladesh Center for Workers’ Solidarity

Day: September 15, 2021

অনাগত সন্তান নষ্ট করে ফেলা/ স্বামী হতে পরিত্যাক্ত বা প্রতারিত হওয়া

মর্জিনা আক্তার ( গার্মেন্টস  শ্রমিক) , বয়স ২৬ বছর, স্বামীর নাম রাসেল। ০৩ বছর আগে সম্পর্ক করে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের আগে তার স্বামীসহ তিনি একই কারখানায় একই ফ্লোরে পাশাপাশি কাজ করার সুবাদে তাদের মধ্যে পরিচয় শুরু হয়। সম্পর্কের এক পর্যায়ে তিনি রাসেলের নিকট হতে বিয়ের প্রস্তাব পান। মর্জিনা আক্তার তার আবেদনে রাজি হয়ে তার পরিচিত মহিলাকে স্বাক্ষী রেখে হুজুরের মাধ্যমে বিয়ের কাজ সম্পূর্ন করেন ( কাজী অফিস এবং কাবিন নামা ছাড়াই)।

বিয়ের পর মর্জিনা আক্তার তার স্বামীর আসল রুপ দেখতে পায়, নেশা করা- জুয়া খেলা ইত্যাদি বাজে অভ্যাসের কারণে মর্জিনা আক্তারের বেতনের টাকা চুরি করে / ছিনিয়ে নিয়ে যায়। প্রতিবাদ করলে শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়। বিয়ের একবছর পর মর্জিনা আক্তারের গর্ভে সন্তান আসার পর থেকেই তার স্বামী অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং জোর করে গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে বাধ্য করান। গর্ভের সন্তান নষ্ট করার পর থেকেই তার স্বামী আর ঠিকমত বাসায় আসেনা এবং তার কোন খোঁজ খবরও রাখে না। মর্জিনা আক্তার  খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তার স্বামী আগেও একটি বিয়ে করেছেন এবং এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। বর্তমানে তার স্বামী আগের বৌ এর সাথে সংসার করছেন।

মর্জিনা আক্তারের মতো অসংখ্য নারীদের নির্যাতিত হবার গল্প ছড়িয়ে রয়েছে আমাদের আশেপাশে।

উপরোক্ত ঘটনার আলোকে কোনাবাড়ী বিসিডব্লিউএস সেন্টার লক্ষ্য করেছে যে- বর্তমান সময়ে  সন্তান নষ্ট করে ফেলা/ স্বামী হতে পরিত্যাক্ত হওয়া বা প্রতারিত হবার ঘটনায় যারা সম্মুখীন হচ্ছেন  তারা সবাই যুবতী বয়সের কর্মী/ গার্মেন্টস কর্মী।

এসব যুবতীরা একই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করার সুবাদে/ সময় কাটানোর ফলে মন দেওয়া নেওয়ার পর্যায়ে চলে যায় এবং একপর্যায়ে তারা স্থানীয় হুজুরের মাধ্যমে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন ( কাজী অফিস/ আইন মোতাবেক কোন ডকুমেন্টস সংগ্রহে না রেখেই)।  এছাড়াও কর্মএলাকার বাড়ীওয়ালারা ব্যাচেলর রুম ভাড়া দিতে না চাওয়ায় তারা অসচেনতার বসে- মিথ্যা পরিচয়, অসাধু আইনজীবীর মাধ্যমে নোটারি পাবলিক এবং ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে  স্বামী- স্ত্রীর পরিচয়ে রুম ভাড়া নিয়ে থাকছেন।

যারফলে, একটি নির্দিষ্ট সময়ে এসে স্বামী যখন দেখে তার সঙ্গিনী মা হতে চলেছে তখনই সুযোগ বুঝে যুবতীদের অনাগত সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ দিচ্ছেন অথবা  প্রতারনা করে অন্য কোথাও পালিয়ে যাচ্ছেন। নিজের সংসার টিকিয়ে রাখতে, অনাগত সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখাতে এবং সন্তানের পিতৃ পরিচয় নিশ্চিত করতে গিয়ে নির্যাতিত নারীরা যেসব ঘটনার সম্মুখীন হনঃ

  • কর্মএলাকার স্থানীয় নেতাদের কাছে অভিযোগ নিয়ে গেলে তাদেরকে বেশ্যা হিসেবে গালি শুনতে হয়।
  • থানা পুলিশের কাছে ডকুমেন্টসবিহীন  অভিযোগ নিয়ে গেলে, তাদেরকে গুরুত্ব না দিয়ে পরিচিত আইনজীবীদের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে অথবা মোটা অংকের টাকা দাবী করে থাকে।
  • কাউন্সিলর অফিসে অভিযোগ নিয়ে গেলে তাদেরকে বলে, তোমাদের বিয়ের কাবিন নামা কই? যদি কাবিন নামা না থাকে তাহলে থানায় গিয়ে অভিযোগ করো।

সমাজের অসহযোগীতা এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস না থাকার কারণে প্রতারিত যুবতী নারীরা কোথাও অভিযোগ করতে পারে না/ আইনের আশ্রয় নিতে পারে না এমনকি মান সম্মান নষ্ট হবার ভয়ে আশেপাশের পরিচিত বা দেশের বাড়িতে নিজেদের পরিবারকেও জানাতে পারে না  যার কারণে, তারা বাধ্য হয়েই স্থানীয় বেসরকারি হাঁসপাতালে গিয়ে বা অন্য কোন ভাবে নিজের অনাগত সন্তান নষ্ট করে ফেলছেন।  

লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ সরকার  বিভিন্ন আইন প্রতিষ্ঠা করেছে এর পাশাপাশি লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও যৌন হয়রানি বিষয়ে সহযোগিতা প্রাপ্তির জন্য ১০৯, ৯৯৯, ৩৩৩, ১৬২৬৩, ১০৯৮, ১৬১০৮ হেল্প লাইন সার্ভিস চালু করেছে। লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে পিছিয়ে থাকা গার্মেন্টস কর্মী সহ অন্যান্য পেশাজীবীদের জন্য করনীয় হিসেবে সবার মাঝে সচেতনা সৃষ্টি এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ বৃদ্ধির পাশাপাশি আমাদের সকলকে শপথ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে-                 

যে নারীর গর্ভে আমাদের জন্ম সেই, নারী জাতিকে আমরা কখনোই অসম্মান করবো না।

নওশাদ রায়হান

বিসিডব্লিউএস- কোনাবাড়ী।

Updated: September 16, 2021 — 10:37 pm
”শ্রমিক বান্ধব ব্লগ” © 2018