পঁচিশের কোঠা ছুঁই ছুঁই করা তানিয়াকে দেখে চিনতে পারিনি। মনেও করতে পারছি না কোন দিন দেখা হয়েছিলো কিনা ।
আমার রুমে ঢুকে ,সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করলেন। মাস্ককের কারণে চিনতে পারলাম না।তবে অনুধাবন করতে পারিনি গল্পটা মনে দাগ কাটবে।আজ থেকে আটমাস আগে দুই মাসের মেয়ে কোলে পারিবারিক সমস্যার জেড় ধরে আমার অফিসে আসেন।
স্কয়ার ফ্যাশন লি. এ লে’ম্যান হিসাবে কাজ করে আসছিলেন। এরই মাঝে গর্ভবতী হয়ে পড়েন।স্বামীর সাথে সমস্যাটা আরও তীব্র হয়ে গেলো, কারণটা ছিলো এখন আর আগের মতন কামাই করতে পারবো না।বাচ্চা নষ্ট করতে বললো,আমার প্রথম সন্তান কি করে পারবো আমি?শুরু হলো অকথ্য শাররিক ও মানষিক নির্যাতন…….
মেয়ে হবার পর মাতৃত্বকালীন ছুটির ৮0,000 টাকা নিয়ে কোথায় চলে গেলো আর কোন খবর পেলেন না ।স্বামীর বাড়ির লোকজনের সাথে কথা বলেও কোন খবর পেলেন না। কিছুদিন পর জানতে পারলেন স্বমী ২য় বিয়ে করছেন।মেয়ে নিয়ে লোকজনের কাছে চেয়ে খেতেন।একটা বাসায় ২ বেলা খেয়ে ৫০০ টাকা বেতনে কাজ করতে লাগলেন।কিন্তু কপাল খারাপ….শুরু হলো করোনার ২য় ঢেউ।কাজটাও চলে গেলো।
গল্পটা ছিলো ৮ মাস আগের। আমাদের কাছে আসছিলেন ভরণপোষণ যেন আদায় করে দেই।অতপ:র পাঠালাম গাজীপুর ব্লাস্টের অফিসে । ওনারা ওনাদের কার্যক্রম শুরু করেন।এর পর ওনার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় কারন ওনার নিজের কোন ফোন নাই।
বাস্তবতার গল্পটা এবার শুরু করি…….
অভাবটা তানিয়াকে এতটাই গ্রাস করে ছিলো যে,বাড়িওয়ালা ১২০০ টাকা বাসা ভাড়া আটকে যাওয়াতে সব রেখে বের করে দেন। বাচ্চা নিয়ে রাস্তায় কাটালেন ৪ দিন। ডাষ্টবিনের ফেলে দেওয়া খাবার খেয়ে কাটে দিন। নিজে ময়লা খাবার খেতে পারি ,বাচ্চাকে তো খাওয়াতে পারি না।তীব্র কষ্টে বাচ্চাটাকে বোনের সংসারে রেখে আসছি। ও ছাড়া অমার আর কেও নাই।
আপা আমি আজকে কোর্ট এ গিয়েছিলাম,টাকা নাই তাই ৮ টার সময় হাঁইটা গেছি আবার আইছি। খিদা পেটে আর কোলাইতেছে না।খাইছিলাম গতকাল দুপুরে ।কেথাটা শুনে খুব মায়া হলো, আসমা আপাকে দিয়ে রুটির প্যাকেট আর কলা এনে দিলাম। আশ্চার্য খাচ্ছে না, ২ গ্লাস পানি খেয়ে নিলো। বার বার বলার পরও খাচ্ছিলো না ,জবাব শুনে হতবাক,আপা পানি খাইয়া পেট ভরছে এখন না খাইলেও চলবো। রাতের লাইগা রাইখা দেই।
আরেকটু কষ্টের গল্পো শুনলাম, আপা আমার শনিবার থেকে চাকুরী হইছে আগের অফিসে। কিন্তু যেই খালার লগে থাকি সে আমারে ১০০০ টাকা দিতে কইছে,আইজ ৩ দিন ধরে আমারে খাওন দিতাছে কোন টাকা পয়সা ছাড়া তয় ওনিও তো গরীব মানুষ।আমারে যদি কেও ১ বেলা খাওন দিতো তয় ২ বেলা পানি খাইয়া চালায় দিতে পারমু………..
কথাগুলো শুনে সিদ্ধান্ত নিলাম ওনার ১ মাসের খাবারের দায়িত্ব আমি নিবো। যেই কথা সেই কাজ…….পুরো মাসের খাবার দেখে ওনি আত্বচিৎকার করে আমার হাত ধরে বলছিলেন “আপা বাস্তবতা অনেক কঠিন , অনেক কঠিন ”…………
রোকসানা ইয়াছমিন শিমুল
সেন্টার -কোঅডির্নেটর
বড়বাড়ি-গাজিপুর
জীবের আত্মারূপে স্রষ্টা স্বয়ং জীবের মধ্যেই অবস্থান করেন। তাই জীবের সেবা করলেই আসলে স্রষ্টারই সেবা করা হয়। প্রত্যেক জীবের প্রতি যত্নবান হলে এবং তাদের ভালোবাসলে, তবেই সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করা হয়। এ জন্যেই স্বমী বিবেকানন্দ বলেছেন- “জীবে প্রেম করে যেই জন / সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।”
এতো দুঃখের, কষ্টের কথা। খুব খারাপ লাগল। আশা করি উনি নিজের পায়ে দাড়িয়ে এই কঠিন সময় পার করতে পারবেন।
আমি অর্থ কষ্ট বড় হয়েছি তাই ক্ষুধার যন্ত্রণা কি তা আমি বুঝি।
আল্লাহু আপনাকে সহ্যকরার ক্ষমতা দিন।