”শ্রমিক বান্ধব ব্লগ”

Bangladesh Center for Workers’ Solidarity

ফাস্ট ফ্যাশন বা অটোমেশনঃ বাংলাদেশের গার্মেন্টস কর্মীদের জন্য আশির্বাদ না অভিশাপ?

বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী গার্মেন্টস শিল্পের অন্যতম বৃহৎ কেন্দ্র। বিশেষ করে অটোমেশনের ক্রমবর্ধমান চাহিদা এই শিল্পকে আরও শক্তিশালী করেছে। বর্তমানে দেশের মোট রপ্তানির ৮০% এর বেশি আসে গার্মেন্টস খাত থেকে। তবে ফাস্ট ফ্যাশনের এই অগ্রগতি যেমন কর্মসংস্থানের নতুন দরজা খুলে দিয়েছে, তেমনি গার্মেন্টস কর্মীদের জীবনে নানা চ্যালেঞ্জ ও সংকট তৈরি করেছে।

ফাস্ট ফ্যাশনের কারণে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গার্মেন্টস শিল্পের প্রসার ঘটেছে। এর কিছু ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিক তুলে ধরা হলোঃ

অনেক গার্মেন্টস কর্মী মনে করেন, ফাস্ট ফ্যাশনের কারনে তারা কর্মসংস্থান পেয়েছেন। এই শিল্প না থাকলে তাদের পরিবার চালানো কষ্টকর হতো।

কিছুকর্মী মনে করেন, ফাস্ট ফ্যাশনের চাহিদা মেটানোর জন্য তাদের নতূন প্রযুক্তি ও দক্ষতার প্রশিক্ষণ পেতে হয়েছে, যা তাদের কাজের মান উন্নত করেছে।

কিন্তু, এদিকে,

কিছু শ্রমিকরা মনে করে, ফাস্ট ফ্যাশনের তারাহুড়া  এবং উৎপাদনের উচ্চ্য লক্ষ্যমাত্রা তাদের অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য করে। অতিরিক্ত কর্মঘন্টা মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

অনেক সময় কর্মীদের চাকরির নিশ্চয়তা থাকে না এবং হুট করেই চাকরি হারানোর ঝুকি থাকে।

বেশিরভাগ কর্মী মনে করেন, তারা কঠোর পরিশ্রমের তুলনায় ন্যায্য মজুরি পান না।

কিছু কর্মী পরিবেশ দূষণ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন যেমন—

পোশাক রঙ করার জন্য রাসায়নিক ব্যবহৃত হয়, যা সরাসরি পানিতে ফেলা হয়। এর ফলে নদী, জলাশয়, খাল দূষিত হয়।এছাড়া ফাস্ট ফ্যাশনের দ্রুত চাহিদা মেটানোর কারণে প্রচুর পোশাক ফেলে দেয়া হয়,যা টেক্সটাইল বর্জ্য বাড়ায়।

গার্মেন্টস কর্মীরা সমাধানের পথ হিসেবে যা আশা করেন,

  • নায্য মজুরি নিশ্চিতকরন
  • কাজের পরিবেশ সুরক্ষিত এবং উন্নত করা
  • শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দক্ষতা বৃদ্ধি
  • শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা
  • চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা

এছাড়া,

  • শক্তিশালি শ্রম আইন প্রয়োগ
  • শ্রমিক ইউনিয়ন শক্তিশালী করাঃ ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রমে বাধা না দিয়ে শ্রমিকদের মতামত গুরুত্ব দিয়ে গ্রহন করা উচিত।
  • টেকসই উৎপাদনঃ ফাস্ট ফ্যাশন কে আরও পরিবেশবান্ধব করতে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন, এতে শ্রমিক এবং পরিবেশ উভয়ের জন্য একটি ভারসাম্যপুর্ণ পরিবেশ তৈরি হবে।

সর্বোপরি, ফাস্ট ফ্যাশন শিল্প শ্রমিকদের জীবনে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে, তবে তা শ্রমিকদের শারীরিক, মানসিক এবং আর্থিক চাপে ফেলে দিচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন এবং শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার মাধ্যমে এই শিল্পের নেতিবাচক প্রভাব কমাতে সরকারের পাশাপাশি কারখানা মালিক এবং আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড গুলোর সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

Updated: January 15, 2025 — 12:41 pm

বহুরুপী যুদ্ধের মাঝে জীবিকা….

প্রতি দিনের জীবনযাত্রা, কষ্টের মাঝে আমাদের সংগ্রামের গল্প: গ্রামগঞ্জ থেকে এসে পুরো রাজধানী, গাজীপুরসহ বাংলাদেশকে উন্নত করেছি আমরা পোষাক শ্রমিকের ভুমিকিই বেশি । আমাদের বসবাস নোংরা দূর্গন্ধযুক্ত ময়লার মাঝে। শারীরিকভাবে আমরা শ্রমিকরা , সকালে , রাতে নোংরা পানি , গাড়ির যানযট পারি দিয়ে আসা যাওয়া, লাঞ্চের সময় ১ ঘন্টার মধ্যে দুপুরের খাবার খেয়ে আসতে হয়। ময়লা ও নোংরামুক্ত পরিবেশ মুক্ত চাই আমরা পোষাক শ্রমিকেরা। পরিবেশ বাচান ,ভালো থাকি সবাই,আমাদের কথা ভাবুন।

সচেতন হওয়ার দরকার সাধারন মানুষের ময়লা ফেলার সময় ভাঙা কাচ বা ধারালো বস্তু আলাদা করে রাখা ।

সরকার ও প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষা ও সরঞ্জামের ব্যাবস্থা করা, প্রশিক্ষন দেওয়া এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নজরদারী বাড়ানো।

Updated: January 9, 2025 — 12:27 pm

কারখানা পর্যায়ে নারী নেতৃত্ব বাঁধাসমূহ এবং এই বাঁধাগুলি কাটিয়ে উঠতে যা করা প্রয়োজন

কারখানা পর্যায়ে নারী নেতৃত্বের জন্য কিছু প্রধান বাঁধা রয়েছে, যা নিচে উল্লেখ করা হলো:

1.      সাংস্কৃতিক বাঁধা: অনেক সমাজে নারীদের নেতৃত্বের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব বিদ্যমান। এই কারণে নারীদের নেতৃত্বের সুযোগ কমে যায় ।

2.      শিক্ষার অভাব: নারীদের মাঝে প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অভাব থাকলে নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুতি নিতে অসুবিধা হয় ।

3.    নেতৃত্বের অভিজ্ঞতার অভাব: নারীরা অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের ভূমিকা থেকে বঞ্চিত হন, যা তাদের অভিজ্ঞতা অর্জনে বাঁধা সৃষ্টি করে ।

4.      নেটওয়ার্কের অভাব: পুরুষদের তুলনায় নারীদের পেশাদার নেটওয়ার্কে প্রবেশের সুযোগ কম, যা তাদের ক্যারিয়ার উন্নয়নে বাঁধা দেয় ।

5.     সম্ভাব্যতা সমর্থনের অভাব: পরিবার ও সমাজ থেকে নারীদের সমর্থন ও উৎসাহের অভাব তাদের নেতৃত্বের পথে বাঁধা সৃষ্টি করে ।

6.     কর্মস্থলে বৈষম্য: বিভিন্ন ধরণের বৈষম্য, যেমন বেতন বৈষম্য ও পদোন্নতি বৈষম্য, নারীদের নেতৃত্বে আসার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ।

7.      মা হওয়ার পরবর্তী সমস্যা: মাতৃত্বকালীন ছুটি ও পরিবার পালনের দায়িত্ব নারীদের নেতৃত্বের ক্ষেত্রে অনেক সময় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় ।

8.     মানসিক চাপ: নারীদের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হতে পারে, যা তাদের কর্মক্ষমতা এবং নেতৃত্বের দক্ষতাকে প্রভাবিত করে।

এই বাধাগুলো দূর করতে সরকারের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান ও সমাজের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি ।

কারখানায় নারী নেতৃত্ব বৃদ্ধির জন্য কিছু কার্যকর উদ্যোগের উদাহরণ নিচে উল্লেখ করা হলো:

1.      নেতৃত্ব প্রশিক্ষণ কর্মসূচি: নারীদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি Leadership Development Programs, যা তাদের নেতৃত্বের দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করে ।

2.      মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম: অভিজ্ঞ নারী নেতাদের মাধ্যমে নতুন নেতাদের জন্য মেন্টরশিপ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা ।

3.    ফ্লেক্সিবল কাজের সময়সূচি: পরিবার এবং কাজের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে ফ্লেক্সিবল সময়সূচি প্রদান করা, যা নারীদের কাজের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি করবে ।

4.      নেটওয়ার্কিং ইভেন্ট: নারীদের জন্য নেটওয়ার্কিং ইভেন্ট ও কর্মশালার আয়োজন, যাতে তারা একে অপরের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে ।

5.     নারী নেতৃত্বের উদাহরণ: সফল নারী নেতাদের কাহিনী প্রচার করা, যা অন্যান্য নারীদের অনুপ্রাণিত করবে ।

6.     সামাজিক নিরাপত্তা: কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও সমর্থন নিশ্চিত করা, যাতে নারীরা নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারে ।

7.      পদোন্নতির নীতি: নারীদের জন্য পদোন্নতির স্বচ্ছ এবং ন্যায়সঙ্গত নীতি তৈরি করা, যাতে তারা সমান সুযোগ পায় ।

8.     সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম: কর্মীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম পরিচালনা করা, যাতে তারা নারী নেতৃত্বের গুরুত্ব বুঝতে পারে ।

9.      লিঙ্গ বৈষম্য মোকাবেলার নীতি: প্রতিষ্ঠানে লিঙ্গ বৈষম্য রোধে কার্যকর নীতি এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করা ।

এই উদ্যোগগুলি নারীদের জন্য একটি সমর্থনশীল পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক হতে পারে এবং তাদের নেতৃত্বের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।

Updated: January 9, 2025 — 12:15 pm
”শ্রমিক বান্ধব ব্লগ” © 2018