”শ্রমিক বান্ধব ব্লগ”

Bangladesh Center for Workers’ Solidarity

স্বামীর প্রতারণায় সংসার চাকুরী সবই হারাইলাম।


নাম: জহুরা বেগম, পদবী কোয়ালিটি
আমাদের অভাবের সংসার, পরিবারকে সাহায্য করার জন্য ঢাকায় আসি চাকুরীর খোঁজে। আমি একটা ওয়াশিং ফ্যাক্টরীতে প্রায় ৩ বছর যাবত কাজ করছি। একই কারখানার একজন ছেলের সাথে পরিচয় হয় তারপর আস্তে আস্তে আমাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়, আমরা পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করি।

জহুরা বেগম

আমরা একসাথে সংসার করতে থাকি আমাদের দিন ভালই যাচ্ছিলো একটা সময় আমার পরিবার আমার বিয়ের বিষয়টি জানতে পারে এবং আমার পরিবার তা মেনে নেয়। আমাদের বিয়ের ১০ মাস হওয়ার পর আমার স্বামীর আমাকে নিয়ে তার গ্রামের বাড়ি যায়। গ্রামের যাওয়ার পর দেখি আমার স্বামীর আগে থেকেই বউ সন্তান সবই আছে ওখানে যাওয়ার পর শুরু হয় আমার উপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন। আমার স্বামী এবং তার পরিবার আমাকে চাপ দিতে থাকে আমি যেন ডিভোর্স পেপারে সাইন করি আমি অস্বীকৃতি জানালে আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয় বলে আমাকে মেরে গুম করে ফেলবে আমার পরিবারের কেউ আমার কোন খোঁজ পাবে এবং মারধর করতো একপর্যায়ে আমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করতে বাধ্য হয় তারপর আমার দুলাভাইকে ডেকে আমাকে আমার গ্রামে পাঠিয়ে দেয়। আমি আবার ঢাকায় চলে আসি কারন আমাকে কর্ম করে খেতে হবে।কারখানায় আসার পর আমার সহকর্মীরা বিষয়টি কিভাবে যেন জেনে যায় এবং আমাকে নিয়ে খারাপ খারাপ কথা রটাতে থাকে, বাথরুমের দেওয়ালে আমাকে নিয়ে বিভিন্ন বাজে বাজে মন্তব্য লিখে রাখে যা শুনে কারখানার কতৃপক্ষ আমাকে ডেকে নিয়ে বলে আমাকে চাকুরীতে রাখা যাবেনা কারন আমার জন্য নাকি কারখানার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে একপর্যায়ে আমাকে কারখানা থেকে বের করে দেয়। আমি এই স্বামর জন্য সংসার চাকুরী সবই হারাইলাম।

Updated: May 14, 2025 — 10:35 am

মে দিবস নয় শুধু এক দিনের কথা, এটি আমাদের জীবনের লড়াই।

আমি আখি। প্রতিদিন ভোরে  ঘুম ভেঙ্গে সেলাই মেশিনে বসি, সারা দিন কাজ করি- অন্যের পোশাক বানাই, নিজের ভবিষ্যতটা ঠিক গড়তে পারি না। আগামীকাল মে দিবস, লাল পতাকার দিন। সবার ছুটি, অথচ আমরা যাবো কারখানায়। সবাই শ্রমিকের অধিকার নিয়ে কথা বলবে, মিছিল হবে, ব্যানার উড়বে- কিন্তু আমি, আমরা যারা সেলাই মেশিনে প্রতিদিন জীবনকে আটকে রেখেছি, আমাদের কন্ঠ কি কেউ শুনছে?

আমার চাওয়া বেশি না-

  • বেতনটা যেন বাচার মতো হয়।
  • নিরাপদ কাজের পরিবেশ চাই যাতে ভবন ধ্বসে মরতে না হয়।
  • কাজের সময়টা যেন সহনীয় হয়।
  • অসুস্থ হলে যেন চিকিতসা পাই।
  • অতিরিক্ত কাজের সঠিক পারিশ্রমিক চাই।
  • আমাদের কথা যেন কারখানার মালিকরা শুনেন।
  • ইউনিয়ন করলে যেন চাকরী না যায়।
  • একটু সম্মান, একটু শ্রদ্ধা- এই তো

মে দিবস হোক আমাদের কথা বলার দিন, শুধু শোনার দিন নয়।

Updated: April 30, 2025 — 5:44 pm

সেফটি কমিটি ফাংশনাল না

নাম : সেলিনা আক্তার
পদবী অপারেটর

আমাদের কারখানায় সেফটি কমিটি ফাংশনাল না তাই দেখা যায় বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি গুলো সঠিক নিয়ম পর্যবেক্ষণ করা হয় না, যেমন সুইচ গুলো ফেটে গেছে ও লুজ হয়ে গেছে, ওই জিনিসগুলো চেক করতেছে না, সুইজ গুলো মাঝে মাঝে গরম হয়ে যায় এটা অনেক বড় একটা রিক্স কখন যেন একটা দুর্ঘটনা ঘটে যাবে এতে আমাদের সব সময় দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। সেইফটি ইকুইপমেন্ট দেয় না।
সবচাইতে বেশি ভয় থাকে আয়রন সেকসনে কারণ সেখানে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেশি। আয়রন সেকসন যদি একবার বাস্ট হয়ে যায় তাহলে পুরো কারখানায় আগুন ধরে যাবে, শুধু এটাই নয় আমরা সব কিছুতে আতঙ্কিত থাকি- পিসি কমিটি, সেফটি কমিটি, অভিযোগ কমি্টি, কোন কমিটি এই কাজ করে না শ্রমিকদের পক্ষে। মালিক পক্ষ যেটা বলে সেটাই করে ।তাই আমরা সব সময় একটা ভয় ও আতঙ্কে কাজ করি। আমাদের দিয়ে মাঝে মাঝে জোরপূর্বক ওভারটাইম করায় কিন্ত ওভারটাইমের টাকা কেটে রাখে।
২১/০৪/২৫ ইং তারিখে আমাদেরকে দিয়ে নাইট ডিউটি করানো হয়েছে কিন্তু কোন খাবার খেতে দেয়নি এমনকি কেউ যে কিনে আনতে না পারে সে ব্যবস্থাও বন্ধ করে দিয়েছে ম্যানেজমেন্ট,সিকিউরিটিকে বলেছে কোন শ্রমিক যেন বাহিরে যেতে না পারে এজন্য মেইনগেট তালাবদ্ধ করে রেখেছে তাই আমরা না খেয়ে রাত ১২ টা পর্যন্ত কাজ করেছি, তাই আমাদের সব সময় সবকিছুতেই আতঙ্কে থাকতে হয়। শ্রমিকরা কথা বলতে গেলে বের করে দেয় এবং ব্ল্যাকলিস্ট করে দেয়। তাই কেউ এগুলো নিয়ে কথাও বলে না। RSC বা DIFE দ্বারা অডিট হয় কিনা সেটাও আমরা জানি না।
এসকল কিছুই আমাদের রানা প্লাজার কথা মনে করিয়ে দেয়। আমরা এরকম কোন ভয়াবহতা আর দেখতে চাই না। তাই আমাদের দাবি, RSC বা DIFE যেন ঠিকমতো অডিট করে, আমাদের সাথে কথা বলে এবং আমাদের অবস্থা পরিবর্তনে আমাদের সাহায্য করে।

Updated: April 24, 2025 — 11:46 am
”শ্রমিক বান্ধব ব্লগ” © 2018