”শ্রমিক বান্ধব ব্লগ”

Bangladesh Center for Workers’ Solidarity

গার্মেন্টস কর্মীর যৌগ্যতা অনুযায়ী (পদবী/গ্রেড) পদোন্নতি নির্ধারন না করায় অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ

সালমা (ছদ্মনাম) একজন নারী ২০১৪ইং সালে গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানাতে হেলপার পদে চাকুরীনেন। প্রায় ০১ (এক) বৎসর হেলপার পদে চাকুরী করার পর তার কাজের মানযাচাই করে তাকে সহকারী অপারেটর পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। সহকারী অপারেটর পদে ০৬ (ছয়) মাস কাজ করার পর তাকে জুনিয়র অপারেটর পদে কাজ দেওয়া হয়। একই পদে প্রায় ০২ (দুই) বৎসর কাজ করার পর তাকে সিনিয়র অপারেটর পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল।

নারী শ্রমিকের প্রতিকী ছবি।

২০১৭ইং সালে তিনি গাজীপুর থেকে চাকুরী ছেড়ে দিয়ে আশুলিয়া এরিয়ার একটি পোশাক কারখানাতে চাকুরী নেন। সেখানে ইন্টারভিউ দেওয়ার পর পূর্বের কাজের অভিজ্ঞতা যাচাই করে তাকে সিনিয়র অপারেটর পদেই নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর প্রায় ০৪ (চার)  বছর ঐ কারখানাতে তিনি সিনিয়র অপারেটর পদে কাজ করেন। শ্রমিকের অধিকার নিয়ে কথা বলার কারনে এবং কারখানাতে ইউনিয়ন গঠন করার কারনে কারখানা কর্তৃপক্ষ অন্যায়ভাবে টার্মিনেট করে।

কিছুদিন যাওয়ার আশুলিয়া এরিয়ার অন্য একটি পোষাক কারখানাতে চাকুরীর ইন্টারভিউ দিলে সেখানে তাকে জুনিয়র অপারেটর পদে নিয়োগ দেন। তখন সালমা এই পদবী/গ্রেড সিস্টেমের প্রতিবাদ করলে তাকে ঐ কারখানাতে থেকে বাহির করে দেওয়া হয়।

সেখান থেকে চাকুরী যাওয়ার পর সালমা আশুলিয়ার আরও একটি পোশাক কারখানাতে চাকুরীর ইন্টারভিউ দিয়ে চাকুরী নেন। সেখানে তাকে অপারেটর পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেখানে ও তিনি পদবী/গ্রেড সিস্টেমের প্রতিবাদ করেন এবং সেখানে কয়েক মাস তিনি একই পদে কাজ করার পর কারখানার লাইন চীফের হয়রানি/বাজে প্রস্তাবের কারনে চাকুরী ছেড়ে চলে আসেন।

দীর্ঘ ১১ বছর এই সেক্টরে কাজ করার পর ও সালমা আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানায় জুনিয়র অপারেটর পদে চাকুরী করছেন। সালমা বলেছেন পূর্বে আমার যে কাজের অভিজ্ঞতা ছিল তা কারখানা কর্তৃপক্ষ মূল্যায়ন করলে আমি এখন কারখানার সুপারভাইজার অথবা লাইন চীফ পদে চাকুরী করতাম।

সালমার মতো লাখো নারী ও পুরুষ শ্রমিক জোগ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতি না পেয়ে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং এই কারখানার শ্রমিকরা দেশের অর্থনীতিতে অনেক বড় অবদান রাখলে ও নিজেরাই অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।

সালমা বলছেন শ্রম আইনে গ্রেডের যে সিস্টেম দেওয়া হয়েছে তা কারখানা ম্যানেজমেন্ট মানছেন না। কারখানা গুলোতে বেতন নিয়ে বৈষম্য না থাকলে ও গ্রেড নিয়ে অনেক বৈষম্য আছে।

সালমার মতো আরো ও অনেক পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বলছেন শ্রমআইনে গ্রেডের বিষয়টি সংশোধন করা অত্যান্ত জরুরী। প্রতি ০১ (এক) বছর পরপর শ্রমিকদের কাজের অভিজ্ঞতা মূল্যায়ন করে তাকে পদোন্নতি দেওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে। তাহলেই এই পোশাক কারখানা গুলোতে কাজের মূল্যায়ন ও সমতা বজায় থাকবে।

Updated: March 13, 2025 — 12:18 pm

রোজায় রান্নার যুদ্ধঃ চুলার সিরিয়াল নিয়ে শ্রমিকদের দুর্ভোগ

সেহরির আগে ঘুম থেকে উঠে লাইন দিতে হয়, তবুও সময়মত রান্না করা যায়না। ঘুম থেকে উঠে দেখি চুলায় ১০-১২ জনের সিরিয়াল লেগে আছে। কারো রান্না শেষ হতে দেরী হলে তো আমাদের শেষ! গ্যাসের চাপ কম থাকে, রান্না করতেও সময় লাগে বেশি। আবার কখনো গ্যাস থাকে, কখনো থাকেনা। আগের রাতে রাতে রান্না করে রাখলেও সেহরিতে খেতে গেলে গরম করার উপায় পাইনা। ইফতারের সময়ও একি অবস্থা তাই বাধ্য হয়ে দোকানের ভাজা পোড়া খাওয়া লাগে। প্রতিদিন কিনে খাওয়া কষ্টকর, দামও বেশি।

Updated: March 10, 2025 — 1:54 pm

জীবণটা কষ্টের,তবে স্বপ্নটা অনেক সুন্দর…..

আমি নুসরাত জাহান খাদিজা।সহজ ভাবে বলতে গেলে গামের্ন্টস এ চাকুরী করি,কিন্তু খুব বলতে ইচ্ছা করে আমি এবার ইন্টার পরীক্ষার্থী।জন্মের পর থেকে জুয়ারী বাবা আর গামের্ন্টস্ এ চাকুরী করা মায়ের অভাবের সংসারে বড় হওয়া।

প্রতিনিয়ত চোখের সামনে মাকে টাকার জন্য বাবার কাছে মার খাওয়া দেখে বড় হওয়া।কখনও পড়ালেখোর কথা চিন্তাও করতাম না ।কিন্তু স্কুলে যেতে ইচ্ছা করতো ,তবে ভয়ে বলতে পারতাম না। মা যেন আমার মনকে পড়তে পেড়েছিলো।শুরু হলো আরেক যোদ্ধ।প্রতিমাসে বাবার কাছ হতে টাকা লুকিয়ে মা আমার পড়ার খরচ চালাতেন।আর মা মার খেতেন টাকা লুকানোর কারনে।

একটা সময় এসে নিজেই হাল ছেড়ে দিলাম ,পাশাপাশি পড়ার খরচ ও সংসার খরচ চালানো যাচ্ছিলো না।তাই বাধ্য হয়েই কতদিন সাব কন্ট্রাকে কাজ করলাম আর মন হলো ৮ এর জিএসসি টা দেই।ভোটার আইডি ছাড়া তো কোথাও নিবেও না।সাব-কন্ট্রাকে কাজ করে ৬ মাস কাজ করি ফাকে ফাকে পড়াশুনা করি। একটা পর্যায়ে ভালো রেজাল্ট আসে। আবার মনে হলো এসএসসি টা দেই ।খুব ইচ্ছা করে মানুষের সেবা করি। নার্সদের খুব ভালো লাগে।

সিদ্ধান্ত নিলাম যে ভাবেই হোক নার্স হবো তাই সাইন্স নিলাম।অনেক খরচ সাইন্সে। সাব -কন্ট্রাকে কাজ করে সাইন্সের খরচ চালাতে পারবো না। মা অনেক রিকোয়েস্ট করে তার কারখানাতেই জন্ম নিবন্ধন দিয়ে চাকুরী নিয়ে দিলো। বসেরাও সুযোগ দিলো,কিন্তু কপাল খারাপ….বাবাা এবার পই পই করে পে স্লিপ ধরে বেতন নিয়ে যায়।শুরু হয় মা-মেয়েকে একসাথে টাকার জন্য অত্যাচার । বহুবার বাসা ছেড়ে দিয়েছি কিন্তু তার হাত থেকে রক্ষা পাই নি। এবার এসে লাগলো আমাকে আর পড়ালেখা করতে দিবে না।আমি দমে যাবার মেয়ে নই। এর মাঝেই সাইন্স হতে এসএসসি তে 4.73 পাই।

স্বপ্নেরে পথে আরেক ধাপ এগিয়ে। এখন আর পিছন ফেরা যাবে না। কারখানাতে বললে ,বলে তুমি কলজে ভর্তি হও তোমাকে সপ্তাহে ১ দিন কলেজ করার আনুমতি দেয়া হবে। কলেজে বলার পর তারাও বুঝতে পারে এবং আমাকে সুযোগ দেয়।আমি এখন আলাদা রুম নিয়ে থাকি আমার স্বপ্ন পূরনের জন্য। এবার টেষ্ট পরীক্ষা দিছি,কারখানা ছুটি দিছে তবে বেতন কাটছে।তাতেও আমি খুশি।সবাই আমার জন্য দোয় করবেন ।আমি যেন নার্স হয়ে সবার সেবা করতে পারি……..

Updated: March 7, 2025 — 12:42 pm
”শ্রমিক বান্ধব ব্লগ” © 2018