”শ্রমিক বান্ধব ব্লগ”

Bangladesh Center for Workers’ Solidarity

তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহার করে জুয়া খেলে নিঃস্ব হচ্ছে তরুন শ্রমজীবি মানুষ

বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। সারা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশের জনগন তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সমাজের সকল স্তররের পেশাজীবিরা এখন অ্যান্ড্রয়েড চালিত স্মার্ট ফোন ব্যবহার করছেন। একই সঙ্গে প্রযুক্তির অপব্যবহার করে যুক্ত হচ্ছেন আনলাইন জুয়া খেলায়। কোনাবাড়ী অঞ্চলের প্রায় ৮০% ছাত্র- তরুন- যুবকেরা অনলাইনে জুয়া খেলায় আসক্ত হয়ে রয়েছে।

গার্মেন্টস শ্রমিকদের আমরা অবহেলিত, অসচেতন এবং পিছিয়ে পরা  জনগোষ্ঠী ভাবলেও তারাও এখন স্মার্টফোনের মাধ্যমে প্রযুক্তি ব্যবহার করে ধীরে ধীরে অনলাইনে জুয়া খেলার দিকে আসক্ত হয়ে পরছে।

অনেকটা আগ্রহের সাথে, বন্ধুদের চাপাচাপি, লোভ এবং অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন গেমস খেলার অভিজ্ঞতা থেকেই প্রযুক্তির অপব্যবহার করে, কোনাবাড়ী অঞ্চলের প্রায় ৩০% শ্রমিক অনলাইনে জুয়া খেলার সাথে যুক্ত রয়েছেন।

এটা এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছে যে, সারা মাস বাজি খেলে মাস শেষে বেতন পেয়ে একেবারে বাজির টাকা পরিশোধ করে দিচ্ছেন। এর ফলে যা হচ্ছেঃ

— পরিবারে অশান্তি

— সম্পত্তি বিক্রি

— টাকার জন্য ফ্লোরে মারামারি

— উপার্জন নষ্ট করা

— সম্পর্ক নষ্ট

— মানসিক অশান্তি

— ঋনগ্রস্থ হয়ে পরা।

— কাজে অমনোযোগী হওয়া।

আশিকুর রহমান– তিনি কোনাবাড়ী অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছে।  ১৮ বছর বয়স থেকেই তিনি গার্মেন্টসে কাজ করা শুরু করেন। গার্মেন্টসে দীর্ঘ ০৪ বছর কাজ করে ২লক্ষ টাকা ব্যাংকে জমিয়েছিলেন। কাজ করার পাশাপাশি, খেলাধুলার প্রতি প্রচন্ড আগ্রহী ছিলেন তিনি। মাঠে খেলতে গিয়েই তিনি প্রথমে ঠান্ডা পানীয় দিয়ে বাজি খেলতেন এরপর ৫০০ টাকা করে ম্যাচ বাজি খেলতেন। এভাবেই বাজি খেলা শুরু হয়। একদিন তিনি তার বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারেন, টিভিতে ক্রিকেট ম্যাচের উপরও বাজি ধরা যায়। একা বাজি ধরার সাহস না পেলে অনেকজন একসাথে মিলেও বাজি ধরা যায়। প্রথম প্রথম আশিকুর রহমান অনেক লাভবান হয়েছিল- লাভের টাকা দিয়ে ভালো একটা মোবাইল ফোন কিনেছিলেন। এরপর তিনি বন্ধুদের মাধ্যমে খবর পান, মোবাইলে বিভিন্ন এ্যাপ্স এর মাধ্যমে এই খেলার উপর বাজি ধরা যায়। এরপর থেকেই তিনি এমন পর্যায়ে চলে যান- কারখানায় কাজের সময়ও মোবাইল ব্যবহার করতে হতো যারকারনে, তার চাকুরী চলে যায়। চাকুরী চলে যাবার পর তিনি দীর্ঘ ০৩ বছর ধরে এই জুয়া খেলার সাথে যুক্ত রয়েছেন। জুয়া খেলার সাথে যুক্ত হয়ে তিনি লক্ষ লক্ষ টাকা নষ্ট করেছেন, বর্তমানে তিনি ১.৫ লক্ষ টাকা ঋণের বোঝা নিয়ে ঘুরছেন।

ভুক্তভোগীরা কাছ থেকে জানতে পেরেছি- তারা প্রথমে মাঠ পর্যায়ে এ্যাজেন্টের মাধ্যমে বাজি ধরলেও এখন বেট থ্রি সিক্সটি ফাইভ, বেট ভিক্টর, নেটবেট, ডাফাবেট, উইকেট বেটা লাইভ ক্রিকেট ইত্যাদি বিভিন্ন এ্যাপ্স এর মাধ্যমে বাজি ধরছেন।

বাজি ধরা হচ্ছে- আইপিএল, বিপিএল, বিগব্যাশ, কাউন্ট্রি ক্রিকেট, এশিয়া কাপ, ওয়ার্ল্ড কাপ খেলা গুলোর বল, রান, উইকেট, ম্যাচ নিয়ে।

ধরা যাক- মুম্বাই এবং চেন্নাইয়ের খেলা হচ্ছে। কেউ মুম্বাইয়ের জন্য ১০০০ টাকা বাজি ধরলেন। জিতলে সে পাবে ১৮০০ টাকা। অনুরূপ ভাবে চেন্নাইয়ের হয়ে কেউ বাজি ধরে জিতলে সে পাবে ২০০০ টাকা।

এ্যাপ্স এর মাধ্যমে বিভিন্ন সাইট গুলোতে বাজি ধরার টাকা বিকাশ, রকেট, নগদ এর মাধ্যমে লেনদেন করা হয়ে থাকে। সময়ে সময়ে এসব সাইট বন্ধ হয়ে গেলেও ভিপিএন, প্রক্সি সার্ভারের মাধ্যমে  বিকল্প পন্থায় তা আবার ব্যাবহার করা যায়।

সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হচ্ছে, এসব অবৈধ সাইট গুলোর বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জেলায় তাদের সাইট/ এ্যাজেন্ট অফিস রয়েছে। এসব অফিস থেকে  সার্ভার পরিচালনা, লিংক দেওয়া, লেনদেন করা এমনকি টাকা না পেলে ধরে নিয়ে গিয়ে মারধর করার মত কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

বাংলাদেশের আইনে জুয়া খেলা নিষিদ্ধ করা আছে কিন্তু অনলাইনে জুয়া খেলা নিষিদ্ধ নিয়ে কোন নীতিমালা না থাকায় খুব সহজে, নীরবে, গোপনে, নিরাপদে, বাড়িতে বসে অনলাইনে জুয়া খেলা যাচ্ছে। যারা জুয়া খেলায় আসক্ত তারা বিপিএন- প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার করার কারনে তাদের পুলিশ সহজে খুঁজে পায় না। তাই এসব সমস্যার সমাধান হিসেবে – সচেতনতা, অভিভাবকদের কঠোর হওয়া, জুয়া খেলার কুফল তুলে ধরা, কাউন্সেলিং করা, ধর্মীয় মূল্যবোধ বৃদ্ধি করা, পূর্নাঙ্গ আইন তৈরী করা, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে উন্নত প্রযুক্তি ব্যাবহারে পারদর্শী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

নওশাদ রাইহান

সেন্টার কো-অর্ডিনেটর, কোনাবাড়ী ব্রাঞ্চ

বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কারস সলিডারিটি

Updated: June 30, 2021 — 11:59 am

5 Comments

Add a Comment
  1. তথ্য প্রযুক্তির ব্যাবহারের ফলে আমরা যতটা অগ্রসর হচ্ছি ঠিক ততটাই তরুণ সমাজ বিপদগামী হচ্ছে। এই লেকাটি তারই প্রতিচ্ছবি ও বাস্তব ঘটনা তুলে এনেছে। সুন্দর লেখনী।

  2. লেখাটা বাস্তব চিত্র তুলে এনেছে

  3. একদম বাস্তবতা ফুটে উঠেছে। আমার ও দেখা অনেক শ্রমিক আছে এরকম খেলায় বাজি‌ ধরে ,জুয়ায় আসক্ত হয়ে একদম নিঃস্ব হয়ে গেছে। এক সময় তাদের ভিতরে পরিবারের আর কোন মায়া কাজ করে না ।এমনকি টাকা না পেলে বাড়িতে এসে নিজের স্ত্রী মা-বাবার সাথে খারাপ ব্যবহার করে।

  4. একদম বাস্তবতা ফুটে উঠেছে। আমার ও দেখা অনেক শ্রমিক ,ও তরুণ আছে যারা এরকম খেলায় বাজি ধরে , জুয়া খেলে, একদম নিঃস্ব হয়ে গেছে
    এক সময় তাদের পরিবারের প্রতি আর কোন মায়া থাকে না, টাকা না পেলে মা বাবা স্ত্রী সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে।

  5. Hey just wanted to give you a brief heads up and let you know a few of the pictures aren’t loading
    properly. I’m not sure why but I think its a linking issue.
    I’ve tried it in two different web browsers and both show the
    same outcome.

    my website :: maeng da thai white vein

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

”শ্রমিক বান্ধব ব্লগ” © 2018