”শ্রমিক বান্ধব ব্লগ”

Bangladesh Center for Workers’ Solidarity

Category: শ্রম আইন ও অধিকার

বিসিডব্লিউএস লিগ্যাল এইড সার্ভিসের সহায়তা পেয়ে মোঃ আঃ খালেকের জীবনযাত্রার পরিবর্তন

মোঃ আঃ খালেক- তিনি গার্মেন্টস সেক্টরে কাজ করেছেন ১০ বছরের অধিক সময়।  তিনি কেয়া কসমেটিকস লিঃ (নীট কম্পোজিট ডিভিশন) কারখানায় আগস্ট ১৮, ২০১০ইং তারিখ যোগদান করে অপারেটর-উইনচ হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। মাস শেষে যা বেতন পেতেন তার কিছু অংশ জমা রেখে বাকী অর্থ দিয়ে ছেলে মেয়েসহ ০৪ সদস্যের পরিবার নিয়ে ভালোভাবেই দিন পার করছিলেন।

ডিসেম্বর ০৭, ২০২০ইং তারিখে হঠাৎ কারখানা কর্তৃপক্ষ তাকে এডমিন সেকশনে ডেকে নিয়ে কোয়ালিটি সম্পন্ন উৎপাদন না করার মিথ্যা অপবাদে বরখাস্ত করনের নোটিশ দিয়ে জোর করে  সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখে কারখানা হতে  বের করে দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে মোঃ  আঃ খালেক তার আইনগত প্রাপ্য পাওনাদির ব্যপারে কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগের প্রেক্ষিতে কারখানা কর্তৃপক্ষ তাকে আজ না কাল, সামনের সপ্তাহে, সামনের মাস ইত্যাদি বিভিন্ন অজুহাতে পাওনা টাকা পরিশোধ না করে দীর্ঘ ০৪ মাস সময়ক্ষেপণ  করে থাকে।

এদিকে করোনার কারণে অন্য কারখানায় কাজ না পাওয়ায় দুশ্চিন্তায় থাকা অন্য দিকে বাড়ি ভাড়া, পরিবারের  ০৪ সদস্যদের মুখে খাবারের ব্যবস্থা করণে চাকুরী করে জমানো টাকাও শেষ হয়ে যায় মোঃ আঃ খালেকের।

উপায় না পেয়ে মোঃ আঃ খালেক এপ্রিল ০২, ২০২১ইং তারিখে বিসিডব্লিউএস সেন্টারের মাধ্যমে বিসিডব্লিউএস লিগ্যাল এইড সার্ভিসের নিকট তার সমস্যাবলী তুলে ধরে অভিযোগ দাখিল করেন।

বিসিডব্লিউএস লিগ্যাল এইড সার্ভিস-  মোঃ আঃ খালেকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে বারবার আলোচনা ও যোগাযোগ করার কারণে অক্টোবর ১১, ২০২১ ইং তারিখে কারখানা কর্তৃপক্ষ মোঃ আঃ খালেককে অফিসে ডেকে নিয়ে আইনগত প্রাপ্য ১,২২,০০০ টাকা বুঝিয়ে দেন। 

কারখানা হতে প্রাপ্য টাকা বুঝে পেয়ে মোঃ আঃ খালেক  বিসিডবিউএস-কে অসংখ্য ধন্যবাদ জানান। তিনি আরও জানান গার্মেন্টসে কাজ করার তার আর কোন ইচ্ছা নেই, পরিবারের সদস্যদের চাহিদা মিটাতে  তিনি এই টাকা দিয়ে একটি মুদি দোকান দিতে চান ।

পরবর্তীতে বিসিডব্লিউএস সেন্টার মোঃ আঃ খালেকের খোঁজ নিয়ে জানতে পারে জীবনযাত্রার পরিবর্তনে তিনি সত্যি সত্যিই একটি মুদি দোকান দিয়েছেন।

মোঃ আঃ খালেকের নতুন মুদি দোকানের চিত্র

নওশাদ রায়হান

বিসিডব্লিউএস- কোনাবাড়ী

Updated: November 22, 2021 — 4:12 pm

অসহায় শ্রমিকের শ্রমঅধিকার আদায়ের গল্প

গাইবান্ধা  জেলার এক অজপাড়া গাঁয়ের ২২ বছর বয়সী সাহসী তরুন  রাসেল। ৪ ভাই -বোনদের মধ্যে  রাসেল  বড় ছেলে । মা, বাবা আর দাদি সহ ৮ জনের সংসার । ভূমিহীন  রাসেল  এর বাবা পরের  কৃষি  জমিতে কাজ করে কোন রকমে  সংসার চালায়। বাবার অমানষিক পরিশ্রম  সহ্য করতে না পেরে পড়াশোনা  ছেড়ে  বাবার সাথে  কৃষি কাজ শুরু করে। দুইজনের এত পরিশ্রমেও  সংসারের অভাব  পুরন হচ্ছে না।

অবশেষে সংসার এর প্রয়োজন মেটাতে কাজের সন্ধানে গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসে রাসেল।

গাজীপুরে একটি গার্মেন্টস কারখানায়  কাজ নেয়। গ্রামের সরল ছেলে জীবিকার তাগিদে মন দিয়ে কাজ করে।  কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন, গামেন্টস এ  খালি গালি গালাজ, খারাপ ব্যবহার,  আর এতো খাটুনীর পর বেতন অনিয়মিত। সহকর্মীরা সবাই বলে এই অত্যাচার সহ্য করেই নিরুপায় হয়ে  কাজ করতে হবে কিছু বললেই চাকরি চলে যাবে।

তারুন্যদ্বীপ্ত রাসেলের প্রতিবাদী চেতনা এই অন্যায় আর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সবসময় কিছু করে শ্রমিকদের শোষনের হাত থেকে মুক্ত করার চেষ্টা ছিল।  পরিচিত এক শ্রমিকের কাছ থেকে বিসিডব্লিউএস এর খোজ পায়। বিসিডব্লিউএস এর ভাইবোনদের কাছ থেকে রাসেল শ্রমআইন, শ্রমিকদের অধিকার এর উপর সচেতন  বিষয়ক প্রশিক্ষন নেয়। সে প্রশিক্ষনের পর বুঝতে পারে শ্রমিকের অধিকারের কথা আর কিভাবে কর্তৃপক্ষের সাথে শান্তিপূর্ন আলোচনা করে অধিকার আদায় করা যায় তাও জানতে পারলো।

রাসেল সহকর্মীদের সাথে আলোচনা করে, সবাইকে নিয়ে কথা বলে কারখানার ম্যানেজম্যান্ট এর সাথে। সব শ্রমিক একত্রিত হয়ে কারখানার ম্যানেজম্যান্টকে বুঝাতে সক্ষম হয় যে কারখানায় উৎপাদনের চাকা সচল রাখতে আর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে শ্রমিকদের ভালো পরিবেশ দরকার,তাদের ন্যায্য পাওনা দিতে হবে। তাহলেই  শ্রমিকরা কোন আন্দোলন  করবে না। উৎপাদন ও ঠিকমতো হবে।শ্রমিকদের মন ভালো  থাকবে।

রাসেল ও তার সহকর্মীরা বিসিডব্লিউএস পরিবার কে ধন্যবাদ জানিয়েছে।

এভাবে বিসিডব্লিউএস থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে হাজারো শ্রমিক সচেতন হয়ে তাদের অধিকার আদায় করেছে, শ্রমিকদের সুন্দর কর্মপরিবেশের জন্য বৃদ্ধি পেয়েছে হাজারো কারখানার উৎপাদনশীলতা এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে রাখছে অনন্য ভূমিকা।

মোঃ রাসেল

একজন গার্মেন্টস শ্রমিক

সম্পাদনা

হাবিবা

সংগঠক. বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কারস সলিডারিটি

Updated: July 14, 2021 — 10:12 pm
”শ্রমিক বান্ধব ব্লগ” © 2018