”শ্রমিক বান্ধব ব্লগ”

Bangladesh Center for Workers’ Solidarity

Category: শ্রমিকের তথ্য ও প্রজুক্তি বিষয়ক প্রশিক্ষন

সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে গোলক ধাঁধায় গার্মেন্টস শ্রমিক

ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

একবিংশ শতাব্দীর পুরোটা জুড়েই চলছে প্রযুক্তির জয়জয়কার। দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কাজে প্রযুক্তির কাছে মানুষ এখন দায়বদ্ধ। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে গার্মেন্টেসে কর্মরত  পিছিয়ে পড়া শ্রমিকেরাও এখন দিনদিন প্রযুক্তি ব্যবহারের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যায় গার্মেন্টেসে কর্মরত প্রায় প্রতিটি শ্রমিক/ শ্রমিকের পরিবারের  নিকট ছোট বৈদ্যুতিক ডিভাইস (স্মার্ট ফোন) রয়েছে।

যুগের সাথে তাল মিলিয়ে/ সময়ের প্রয়োজনের খাতিরে/ বিনোদনের চাহিদা মেটাতে শ্রমিকেরা  ছোট ডিভাইসের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া এ্যাপ্স ব্যবহার করে থাকে যেমনঃ ফেসবুক, ইমু, ইমেল, ইউটিউব, ভিডিও এডিটর এ্যাপ্স, টিকটক, ম্যাসেঞ্জার, লাইকী ইত্যাদি ইত্যাদি।

কিন্তু শ্রমিকেরা সোশ্যাল মিডিয়ার ভালো এবং মন্দ দিকগুলা না জানার কারণে প্রতিনিয়ত নিম্ন লিখিত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেনঃ

  • সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচুর ভুয়া/ ফেক আইডি ব্যবহারকারীর কারণে অধিকাংশ নারী শ্রমিকেরা প্রতারণার স্বীকার হওয়া
  • একে অপরের সাথে ফেসবুকের মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে উঠছে ফলে পরবর্তীতে সাজানো মানুষটির সঙ্গে বাস্তবতার মিল খুঁজে না পেয়ে হতাশাগ্রস্থ হওয়া
  • বিভিন্ন ধরনের ভুয়া তথ্য বিশ্বাস করা এবং প্রচার করা
  • অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে স্বাস্থ্য এবং মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া
  • ফেসবুক আইডি /ইমু হ্যাক হয়ে যাওয়া
  • স্মার্ট ফোন ব্যবহারে দক্ষতা না থাকার ফলে অন্যজনের সাহায্য নেওয়া (অধিকাংশ সময় টাকা দিয়ে সমস্যা সমাধান করতে হয়)
  • অন্যজনের সাহায্য নিয়ে নিজের স্মার্ট ফোন ব্যবহারের ফলে অজান্তেই ব্যক্তিকে গোপন এবং নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট তথ্য দিয়ে দেওয়া
  • নিজের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস না থাকা/ না বুঝার কারণে অন্যজনের ডকুমেন্টস দিয়ে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় এ্যাকাউন্ট খোলা
  • না বুঝে বিভিন্ন ধরনের বিপদজনক তথ্য শেয়ার করা
  • সোশ্যাল মিডিয়ায়  অপরিচিত জনের সাথে সহজেই নিজের একান্ত বিষয় নিয়ে আলোচন করা
  • একটু বাড়তি আয়ের আশায় টাকা দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ধরনের আইডি খুলে প্রতারিত হওয়া (রিং আইডি, সহজ লাইফ, জুয়া খেলার সাইট ইত্যাদি)
  •  স্বল্প মূল্যের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে  বিভিন্ন ধরনের ইকমার্স সাইটে অগ্রিম টাকা দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসের অর্ডার করা এবং প্রতারণার স্বীকার হওয়া
  • না বুঝে বিভিন্ন অশ্লীল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা
  • বিভিন্ন ধরনের ভিডিও বানিয়ে নিজেদের মূল্যবান সময় অপচয় করা
  • বিভিন্ন ধরনের ভিডিও দেখে নিজের সময় নষ্ট করা

আমরা সবাই জানি, বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলো বেশ জনপ্রিয়।বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলোর একটা বিপ্লব চলছে। সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম গুলোর যাত্রা অনেক আগে থেকে শুরু হলেও মূলত ২০১০ সালে পৃথিবীজুড়ে ভালোভাবে আত্মপ্রকাশ করে। যেকোন প্রযুক্তি রাতারাতি আবিষ্কৃত হয় নি। আসলে শত শত বছরের বিভিন্ন কনসেপ্ট থেকেই সেগুলো আবিষ্কার হয়েছে। তেমনি করে সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম গুলোর আবিষ্কারের ক্ষেত্রে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। ইন্টারনেট আবিষ্কারের পর সোশ্যাল মিডিয়ার মুল ধারণা মানুষের মধ্যে আসে। প্রাচীনযুগে মানুষ চিঠিপত্র আদান প্রদানের মাধ্যমে ভাবের আদান-প্রদান করতো। তবে এক্ষেত্রে তথ্য আদান-প্রদান করতে দীর্ঘ সময় লেগে যেত। মূলত চিঠিপত্র আদান প্রদানের এই  ধ্যানধারণা থেকেই আজকের এই আধুনিক সোশ্যাল মিডিয়ার আবির্ভাব। সোশ্যাল মিডিয়ার মুল বৈশিষ্টই হল সহজতর যোগাযোগ ব্যবস্থা !

শুধু গার্মেন্টস শ্রমিকেরা নয় দিনের-পর-দিন ধরে আমরা সকলেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে যাচ্ছি এবং ব্যবহারের হার দিনকেদিন বেড়েই চলছে। ব্যক্তিগত আচরণ থেকে শুরু করে পেশাগত কাজে সবকিছুতেই ইন্টারনেটকে জড়াতে হয় যেখানে অভিনেতা স্বয়ং আমি, আপনি এবং আমরা।

এ সমস্যার সমাধান একটাই, আমাদের বদলাতে হবে, শ্রমিক ভাই-বোনদেরকে বদলে দেওয়ার দায়িত্ব নিতে হবে, বাংলাদেশ তথ্য ও প্রযুক্তি আইন অনুযায়ী আমাদেরকে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে আরও সচেতন হতে হবে, শ্রমিক ভাই-বোনদেরকে তথ্য প্রযুক্তির উপর উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিতে হবে,  খুব কম সময় নিয়ে নিজেদেরকে সোশ্যাল মিডিয়ায় জড়াতে হবে। কেবল আমাদের ব্যবহারের আধিক্য কমে গেলেই প্রযুক্তিবিদরা বাধ্য হয়ে তাদের কলাকৌশল সংস্কার করে আমাদের প্রাইভেসি বজায় রেখে টেকনোলজি ঢেলে সাজাবে।

নওশাদ রায়হান

বিসিডব্লিউএস- কোনাবাড়ী  

Updated: November 17, 2021 — 4:56 pm

গার্মেন্টস সেক্টরে অটোমেশন প্রযুক্তি/ ৪র্থ শিল্প বিপ্লব

মোঃ সুজন মিয়াঁ ( পিএন কম্পোজিট পোশাক কারখানার শ্রমিক), তিনি কয়েকমাস পূর্বে কারখানায় দেখতে পান- কাটিং সেকশনে নতুন একটি যন্ত্র সংযোজন করা হয়েছে সাথে রয়েছে কম্পিউটারাইজড মনিটর। মনিটরে কয়েকটা চাপ দিতেই নতুন মেশিন হতে তীক্ষ্ণ উজ্জ্বল আলো বের হয়ে মাত্র ৩০ মিনিটের ভিতরে সব কাপড় নিখুঁত ভাবে কেটে ফেলছে। তিনি আরো লক্ষ্য করেছেন এই কাটিং সেকশনে এর আগে অনেক লোক কাজ করতো কিন্তু বর্তমানে ১০ জনের বেশী শ্রমিক দেখাই যায় না।

গার্মেন্টস সেক্টরে অটোমেশন প্রযুক্তি সংযোজনের চিত্র

কারখানাগুলোতে পুরাতন যন্ত্রের পরিবর্তে কম্পিউটারাইজড ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহারের চিত্র

মোসাঃ জাহানার আক্তার (পিএন কম্পোজিট কারখানার পোশাক শ্রমিক), তিনি গতমাসে তাদের সুইং ফ্লোরে লক্ষ্য করেছেন নতুন  ০৪টি আজব যন্ত্র। যন্ত্রগুলো কি সুন্দর করে ফ্লোর পরিষ্কার করছে কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই! ফ্লোর পরিষ্কারক কর্মীদেরকেও তিনি আর কারখানায় দেখতে পান না।

মোঃ সুজন মিয়াঁ এবং মোসাঃ জাহানারা আক্তার তাদের সহকর্মীদের কাছ থেকে শুনে এবং কারখানায় বিভিন্ন সেকশনে গিয়ে লক্ষ্য করেছেন নতুন নতুন যন্ত্রের উপস্থিতি, যা তারা আগে কখনোই চোখে দেখে নাই।

লেখাপড়া এবং প্রযুক্তিগত ধারণা না থাকার কারণে মোঃ সুজন মিয়াঁ এবং মোসাঃ জাহানারা আক্তার কারখানার এসব ব্যাপারগুলো বুঝতেই পারছে না। আসলে এসব হচ্ছে অটোমেশন প্রযুক্তি এটাই হচ্ছে ৪র্থ শিল্প বিপ্লব।

 বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের মাধ্যমে শুরু হয় ১ম শিল্প বিপ্লব,  বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কারের মাধ্যমে শুরু হয় ২য় শিল্প বিপ্লব, কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট আবিষ্কারের মাধ্যমে শুরু হয় ৩য় শিল্প বিপ্লব। প্রসার হয়েছে ইলেক্ট্রনিক্স আর ইনফরমেশন টেকনোলজির বিস্তার। জগতকে এনেছে মানুষের হাতের মুঠোয়। ধারণা করা হয়েছিল এই ইন্টারনেটই ৪র্থ শিল্প বিপ্লবকে নেতৃত্ব দিবে এবং করেছেও তাই।

কৃষি নির্ভর গ্রামীণ অর্থনিতী ম্যানফ্যাকচারিং শিল্পে রূপান্তরীত হয়ে ১৯৭৭ সালে রিয়াজ গার্মেন্টস ফ্রান্সে পোশাক রপ্তানি শুরুর মধ্যে দিয়ে কৃষি নির্ভর অর্থনিতীকে পোশাক শিল্প অর্থনিতীতে রূপান্তর করে নেওয়া বাংলাদেশে তথ্য ও প্রযুক্তির সূচনা হয়েছিল ১৯৬০ সালে পারমানবিক গবেষনার মধ্য দিয়ে। ১৯৯০ এর দশকে যোগাযোগ ও প্রযুক্তি খাত বাংলাদেশের জনগণকে যথেষ্ট আকর্ষনের মধ্য দিয়ে আবহমান বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনপথকে রাতারাতি পরিবির্তন করে উন্নতদেশের সমান সুযোগ সুবিধাযুক্ত লোকালয়ে পরিণত হওয়া শুরু করলে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার থেকে সফটওয়্যার এবং তথ্য প্রযুক্তি পরিসেবা শিল্পের জন্য জাতীয় বাণিজ্য সংস্থা হিসেবে ‘ বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার এন্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) ‘ প্রতিষ্ঠিত করা হয়।  সেই সাথে প্রতিষ্ঠিত হয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮।

  প্রযুক্তিগত উন্নয়নে দেশব্যাপী ২৮ টি হাইটেক পার্কের মধ্যে দিয়ে  ৪র্থ শিল্প বিপ্লবকে প্রাধান্য রেখে

  • কানেক্টিভিটি ও আইসিটি অবকাঠামো
  • মানব সম্পদ উন্নয়ন
  • আইসিটি শিল্পের উন্নয়ন
  • ই-গভর্ন্যান্স প্রতিষ্ঠানের বিকাশ ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়।

বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জায়গায় তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহার রয়েছে। সরকারি অফিস গুলোর চাইতে বেসরকারি অফিস/ শিল্প-প্রতিষ্ঠান/ গার্মেন্টস সেক্টর গুলোতে দিনদিন অত্যাধিক প্রযুক্তি ব্যবহার হয়ে উঠছে।  

বর্তমান গার্মেন্টস সেক্টরে যেসব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছেঃ

  • প্যাটার্ন তৈরীর ক্ষেত্রে CAD প্রযুক্তির ব্যবহার
  • কাটিং সেকশনে উন্নত মানের লেজার কাটিং মেশিন
  • এ্যাম্ব্রয়ডারি ও প্রিন্টিং এর জন্য কম্পিউটারাইজ সফটওয়্যার সম্পন্ন মেশিন
  • দ্রুতগতি সম্পন্ন সুইং মেশিন
  • ফ্লোর ক্লিনিং এর জন্য অটোক্লিন মেশিন
  • অর্ডার ম্যানেজমেন্ট এন্ড রিকয়ারমেন্টস প্ল্যানিং সফটওয়্যার
  • সুইং প্রডাকশন প্ল্যানিং উইথ টাইম এন্ড এ্যাকশন সফটওয়্যার
  • প্রকিউরমেন্ট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার
  • ফেব্রিক কাস্ট কন্ট্রোল সফটওয়্যার
  • প্রডাকশন কন্ট্রোল সফটওয়্যার
  • ফিন্যানসিয়াল এ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার
  • ফিক্সড এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ও হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার

এগোলই হচ্ছে কারখানার অটোমেশন মানে কারখানার সবগুলো মেশিন এমন একটি সিস্টেমের সাথে যুক্ত হবে যেটি স্বয়ংক্রিয় চালনা থেকে শুরু করে পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রন ও তত্বাবধান করবে এবং একেই বলা হচ্ছে অটোমেশন বা ৪র্থ শিল্প বিপ্লব। এতে বাঁচবে শ্রম উৎপাদন খরচ, কমবে মানবিক ত্রুটি-বিচ্যুতি, বাড়বে উৎপাদন, ঠিক থাকবে পণ্যের গুনগত মান।

৪র্থ শিল্প বিপ্লবটি মূলত ডিজিটাল বিপ্লব, যেখানে কারখানাগুলো ব্যাপক হারে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করবে থাকবে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। শ্রমিকেরাও আপনাআপনি প্রযুক্তির সংস্পর্শে চলে আসবে এবং সেই সাথে দেখা দিবে নিম্ন লিখিত নতুন চ্যালেঞ্জঃ

  • তথ্য সুরক্ষরা অনিশ্চয়তা
  • প্রযুক্তিগত সমস্যা
  • ব্যক্তির গোপনীয়তা অরক্ষিত
  • প্রযুক্তির কারণে শ্রমিকেরা চাকুরী হারানো ( বিশেষ করে নারী শ্রমিকেরা প্রযুক্তি ব্যবহারে অনীহা)
  • ইন্টারনেট ও অন্যান্য প্রযুক্তির মধ্যে অব্যাহত সংযোগের অভাব
  • প্রযুক্তি বিষয়ে আসক্তি হয়ে যাওয়া
  • স্বাস্থ্য এবং চোখের ক্ষতি সাধন
  • প্রযুক্তিগত প্রতারণা
  • প্রযুক্তিগত ক্রাইম বৃদ্ধি পাওয়া
  • অলস হয়ে যাওয়া
  • কম্পিউটারাইজড ভাইরাস এ্যাটাক

তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে পোশাক শিল্পে নিয়োজিত বিশাল এ জনসম্পদ কিংবা স্বল্পশিক্ষিত শ্রমিকেরা কি করবে?- সময় এখন আধুনিক প্রযুক্তি রপ্ত করার, আধুনিক প্রযুক্তির সাথে শ্রমিকদের পরিচিত করার, হাতে কলমে তাদের শিক্ষাদান, প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ানো এবং ভিতী দূর করা, কম্পিউটার প্রশিক্ষণের আওতায় আনা, প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন শ্রমিকদের নিকট তুলে ধরা। কেবল মাত্র প্রযুক্তিতে দক্ষতাই ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে পিছিয়ে পড়া শ্রমিকদের এ যাত্রায় বাঁচিয়ে দিবে।

সর্বপরি, বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংগঠনগুলোকে পিছিয়ে পড়া শ্রমিকদের জন্য উপযুক্ত মঞ্চ প্রস্তুতের দায়িত্ব নিতে হবে।  

নওশাদ রায়হান

বিসিডব্লিউএস- কোনাবাড়ী

Updated: November 10, 2021 — 12:21 pm

অসহায় শ্রমিকের শ্রমঅধিকার আদায়ের গল্প

গাইবান্ধা  জেলার এক অজপাড়া গাঁয়ের ২২ বছর বয়সী সাহসী তরুন  রাসেল। ৪ ভাই -বোনদের মধ্যে  রাসেল  বড় ছেলে । মা, বাবা আর দাদি সহ ৮ জনের সংসার । ভূমিহীন  রাসেল  এর বাবা পরের  কৃষি  জমিতে কাজ করে কোন রকমে  সংসার চালায়। বাবার অমানষিক পরিশ্রম  সহ্য করতে না পেরে পড়াশোনা  ছেড়ে  বাবার সাথে  কৃষি কাজ শুরু করে। দুইজনের এত পরিশ্রমেও  সংসারের অভাব  পুরন হচ্ছে না।

অবশেষে সংসার এর প্রয়োজন মেটাতে কাজের সন্ধানে গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসে রাসেল।

গাজীপুরে একটি গার্মেন্টস কারখানায়  কাজ নেয়। গ্রামের সরল ছেলে জীবিকার তাগিদে মন দিয়ে কাজ করে।  কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন, গামেন্টস এ  খালি গালি গালাজ, খারাপ ব্যবহার,  আর এতো খাটুনীর পর বেতন অনিয়মিত। সহকর্মীরা সবাই বলে এই অত্যাচার সহ্য করেই নিরুপায় হয়ে  কাজ করতে হবে কিছু বললেই চাকরি চলে যাবে।

তারুন্যদ্বীপ্ত রাসেলের প্রতিবাদী চেতনা এই অন্যায় আর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সবসময় কিছু করে শ্রমিকদের শোষনের হাত থেকে মুক্ত করার চেষ্টা ছিল।  পরিচিত এক শ্রমিকের কাছ থেকে বিসিডব্লিউএস এর খোজ পায়। বিসিডব্লিউএস এর ভাইবোনদের কাছ থেকে রাসেল শ্রমআইন, শ্রমিকদের অধিকার এর উপর সচেতন  বিষয়ক প্রশিক্ষন নেয়। সে প্রশিক্ষনের পর বুঝতে পারে শ্রমিকের অধিকারের কথা আর কিভাবে কর্তৃপক্ষের সাথে শান্তিপূর্ন আলোচনা করে অধিকার আদায় করা যায় তাও জানতে পারলো।

রাসেল সহকর্মীদের সাথে আলোচনা করে, সবাইকে নিয়ে কথা বলে কারখানার ম্যানেজম্যান্ট এর সাথে। সব শ্রমিক একত্রিত হয়ে কারখানার ম্যানেজম্যান্টকে বুঝাতে সক্ষম হয় যে কারখানায় উৎপাদনের চাকা সচল রাখতে আর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে শ্রমিকদের ভালো পরিবেশ দরকার,তাদের ন্যায্য পাওনা দিতে হবে। তাহলেই  শ্রমিকরা কোন আন্দোলন  করবে না। উৎপাদন ও ঠিকমতো হবে।শ্রমিকদের মন ভালো  থাকবে।

রাসেল ও তার সহকর্মীরা বিসিডব্লিউএস পরিবার কে ধন্যবাদ জানিয়েছে।

এভাবে বিসিডব্লিউএস থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে হাজারো শ্রমিক সচেতন হয়ে তাদের অধিকার আদায় করেছে, শ্রমিকদের সুন্দর কর্মপরিবেশের জন্য বৃদ্ধি পেয়েছে হাজারো কারখানার উৎপাদনশীলতা এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে রাখছে অনন্য ভূমিকা।

মোঃ রাসেল

একজন গার্মেন্টস শ্রমিক

সম্পাদনা

হাবিবা

সংগঠক. বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কারস সলিডারিটি

Updated: July 14, 2021 — 10:12 pm
”শ্রমিক বান্ধব ব্লগ” © 2018