”শ্রমিক বান্ধব ব্লগ”

Bangladesh Center for Workers’ Solidarity

Category: লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা

কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা রোধে ILO C-190 অনুস্বাক্ষর চাই

কর্মক্ষত্রে শ্রমজীবি নারীদের প্রতি হয়রানী কিংবা নির্যাতন নিত্যদিনের ঘটনা, দিন দিন এটি আরও বাড়ছে। কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের উপর করা সহিংসতা, হয়রানী তাদের কে নাজুক করে ফেলে। এর ফলে শ্রমিকদের একধরনের মানসিক চাপ তৈরী হয় এবং তাদের কর্মস্পৃহা কমে যায়। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতাও হ্রাস পায়। কর্মক্ষেত্রে নারী শ্রমিক হয়রানী ও নির্যাতন প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমুহের সুপারিশমালা নির্ধারন করতে হবে। এজন্য কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানী বন্ধে আই এল ও কনভেনশন ১৯০- এ অনুস্বাক্ষর করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানানো হচ্ছে।

আকলিমা আক্তার পলি

নারী আন্দোলন কর্মী

Updated: June 25, 2021 — 11:58 am

শুন্য অনুভুতি নিয়ে জয়তুনের লড়াই

মনটা আজ তার ভীষণ খারাপ,চোখ- মুখ ফোলা।রাত ৩ টা পর্যন্ত নাইট ছিল।তারপরও আমাদের ফোন পেয়ে অফিসে আসছেন।

কি হইছে বলতেই গড় গড় করে কষ্ট গুলো বলতে শুরু করলেন।

 

“ আমার ২ মাস বয়সে মায়ে আরেক বেডার লগে ভাইগা গেছে। বাপে বিয়া করছে। আমারে দাদী পালছে, বুড়ী অনেক কষ্টে আমারে ৭ কেলাস পর্যন্ত পড়াইছে। হেরপর  ১৪ বছর বয়স হইলে বিয়াইত্তা ফোলামাইয়া আছে  এমন বেডার লগে বিয়া দিল। জামায় উঠতে বইতে নির্যাতন করে লগে খাউন পিন্দনের কষ্ট, উপায় না পাইয়া কাম নিলাম অনন্ত গার্মেন্টস এ।“, কন্ঠ যেন কেঁপে উঠলো, অশ্রুভেজা চোখে নিজের সবুজ ওড়নার দিকে তাকালো ৩৪ বছর বয়সী জইতুন।

কিছুক্ষন সময় নিয়ে নিজেকে সামলিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে আবার শুরু করলো-

“মাস না শেষ হতেই জামাই বেতনের টেকা চায়, বেডায় তাকার লেইগা পাগল হইয়া যায়, মাঝে মইধ্যে মারে, বেতন হাতে পাওনের লগে লগেই তারে টেকা দিয়া দিতাম। দাদীরেও দেওন লাগে, হে থাকে ফুফুর ঘরে। বুড়ী আমারে সোনার ডিম দেওন হাঁস মনে করে, টেকা ছাড়া কোন কতা নাই।“  -বড় একটা নিঃশ্বাস ফেললো।

“এমনেই চইলা গেলো অনেক দিন। পোলা একটা হইলো। কষ্ট কমলো না। পোলারে আরেক বাসায় রাইখা কামে যায়তাম। ঐ বেডিরেও ২০০০ টেকা দেওন লাগতো। কয়টা টেকা জমাইয়া জমি কিনলাম, জামাই রেজিস্ট্রির সময় হের নামে কইরা লইছে।“- গলা যেন ভারী হয়ে আসলো জয়তুনের, ছটফট করে আবার বলা শুরু করলো।

“আইজ ১০ মাস হইলো পোলাডারে গ্রামে লইয়া গেসে জামাই, আমি খুজ না নিলে জামাই এর কোন খবর পাওন যায় না। শর্ত  একটায়, মাসে ১০০০০ টেকা দেওন লাগবো নাইলে পোলার আশা বাদ। অহনে তো বাপে-মায়ে, জামাই, টাকা-পয়সা কিছুই নাই আমার।“

“আফা এখন আর কারও কথা মনে পড়ে না। এই চারডা হাত পাও  ছাড়া কেও আর আমার আপন না।” – অনেক চেষ্টা করেও চোখের পানি আটকাতে পারলনা।

“আমি শূন্য।“

জয়তুনের মনের কষ্ট চোখের পানি হয়ে বের হচ্ছে। করুন চোখে তাকিয়ে রইলো জানালার দিকে।

“আফা, আপনেগো BCWS এ কম্পুটার, শ্রম আইন টেরনিং লইয়া আরও বড় জায়গায় কাম করুম।”

জয়তুন,

নারী শ্রমিক

জইতুনের মতো হাজারো নারী শ্রমিকের কষ্টের সঙ্গী হয়ে  তাদের কল্যানে কাজ করে যাচ্ছে BCWS।

সম্পাদনা

শিমুল

গাজিপুর সেন্টার

বিসিডব্লিউএস

Updated: June 29, 2021 — 11:46 pm

স্বামীর নির্যাতনের বিরুদ্ধে আশুরা বেগমের সাহসী পদক্ষেপ

মোসাঃ আশুরা বেগম, বয়স ৩৮ বছর, ২ সন্তানের মাতা। দেশের বাড়ী পাবনা, বর্তমানে আমবাগ কমিউনিটিতে লাইজু ট্রেইনিং সেন্টারে গার্মেন্টস বিষয়ক কাজ শিখছেন।

আশুরা বেগমের ২০ বছর আগে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। ২০ বছরের সংসারে তাদের ০১ ছেলে এবং ০১ মেয়ে রয়েছে।সংসারের প্রয়োজনে ছেলে-মেয়ে এবং আশুরা বেগমকে দেশের বাড়ীতে রেখে  তার স্বামী কোনাবাড়ী তুষকা গার্মেন্টস এ চাকুরী করতেন। ভালই চলছিল তাদের সংসার।

আশুরা বেগম লক্ষ্য করতে থাকেন- তার স্বামী আগের মত তাদের খোঁজ খবর নেয় না, সংসারের খরচ বহন করে না, ফোন দিলে মাঝে মাঝে তাদের কথা হয়, ছুটির সময় বাড়ীতেও আসে না। আশুরা বেগম খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তার স্বামী আরেকটি বিয়ে করেছেন। আশুরা বেগম তার স্বামীর সাথে যোগাযোগ করে বিয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তাকে অনেক গালাগালি করেন এবং তালাক দেওয়ার হুমকি দিয়ে থাকেন। স্বামীর কাছ থেকে এসব কথা শুনার পর আশুরা বেগমের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরার মত অবস্থা হয়।

গ্রামের বাড়ীতে ছেলে মেয়েকে নিয়ে সংসারের ব্যয় মিটাতে না পেরে এবং তার স্বামীকে ফিরে পেতে ০২ মাস আগে কোনাবাড়ী, আমবাগে বোনের বাসায় আশ্রয় নেন।

 

আশুরা বেগমের এমন সমস্যার কথা শুনে লাইজু ট্রেইনিং সেন্টার থেকে তাকে বলা হয় বিসিডাব্লিউএস– কোনাবাড়ী সেন্টারের সাথে যোগাযোগ করার জন্য।

আশুরা বেগম বিসিডাব্লিউএস কোনাবাড়ী সেন্টারের সাথে যোগাযোগ করে সমস্ত ঘটনাবলি খুলে বলেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ কামনা করেন। আশুরা বেগমের সমস্ত ঘটনা শোনার পর পরামর্শ হিসেবে- জরুরী খাদ্য সহায়তার জন্য ৩৩৩ নাম্বারে ফোন দেওয়া, স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ বা নির্যাতনের সম্মুখীন হলে থানায় অভিযোগ করা/  ৯৯৯ নাম্বারে ফোন দেওয়া এবং  নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিসিডাব্লিউএস এর অবস্থান তুলে ধরা হয়।

 

পরবর্তীতে, তার স্বামী ছেলে-মেয়েদের মায়ায় আশুরা বেগমের সাথে দেখা করতে আসলে, আশুরা বেগম সংসারের ভরণপোষণ এর টাকা এবং  না জানিয়ে বিয়ে করার কথা জিজ্ঞেস করতেই তার স্বামী অকথ্য ভাষায় গালাগালি এবং গায়ে হাত তুলে থাকেন। আশুরা বেগম সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিবাদ করে তার স্বামীকে বলেনঃ আরেকবার গায়ে হাত তুললে ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে পুলিশ আনবো এবং বিসিডাব্লিউএস এর মাধ্যমে থানায় মামলা করবো।

আশুরা বেগমের কাছ থেকে এমন প্রতিবাদী কথা শুনে তার স্বামী ভয় পেয়ে যান। ভয় পেয়ে তার স্বামী আশুরা বেগমকে বলেন- কোথাও অভিযোগ করার দরকার নাই , এই নাও  টাকা সামনের মাস থেকে আমি নিয়মিত মাসের টাকা পৌঁছে দিয়ে যাব।

মরিয়ম আক্তার

সংগঠক, বিসিডাব্লিউএস, কোনাবাড়ী।

Updated: May 28, 2021 — 3:50 pm
”শ্রমিক বান্ধব ব্লগ” © 2018