”শ্রমিক বান্ধব ব্লগ”

Bangladesh Center for Workers’ Solidarity

Category: শ্রমিকের লড়াই ও সফলতার গল্প

নতুন আশায় রিনার এগিয়ে চলা

রিনা গাজীপুরের স্থানীয় একটি গার্মেন্টস এ  চাকুরী করত।

রিনার স্বামী রাজমিস্ত্রী  কাজ করে। স্বামী  সংসারে ঠিকমত টাকা পয়সা দেয় না।  রিনা কোন রকমে চাকুরী  করে দুই ছেলে  মেয়ের খরচ চালায়। অভাবের  সংসারে প্রায়ই ঝগড়া  লেগে থাকত।

কিছু  দিন আগে রাতে রিনা কাজ থেকে আসার পর তার স্বামীর সাথে ঝগড়া হয়। রিনার স্বামী  রিনাকে অনেক মারধর করে।  রিনা রাগ করে পরের দিন গ্রামের বাড়ি  চলে যায়। গ্রামের বাড়ি যাওয়ার আগে অফিসে  সুপারভাইজারকে সব ঘটনা  বলে। সুপারভাইজার রিনাকে ছুটি দেয়। বলে সমস্যা  থাকতেই পারে। ।

রিনা পারিবারিক ভাবে  সবাইকে  নিয়ে  বিচার  শালিশ করে রিনার স্বামী  রিনার কাছে  ক্ষমা  চায়  এবং  রিনা কে নিয়ে আসে।

লাইন চীফ রিনাকে কাজ  জয়েন্ট  করতে বলে। রিনা অফিসে  গেলে সুপারভাইজার কাজ করতে বলে। কিন্ত  এডমিন থেকে  রিনাকে কাজ দিতে মানা করে সুপারভাইজারকে।

এডমিনে রিনা গেলে রিনা কে বলে, “তোমার চাকুরী নাই তুমি চলে যাও। তুমি চার দিন অফিসে  আস নাই।তোমার চাকুরী নাই।তুমি চলে যাও।”

রিনা এখন কোথাও চাকুরী  পায় নি।ঈদের আগে  কোথাও  লোক নেয়না।তার উপর করোনার দ্বিতীয় ডেউ। কি করবে রিনা। সে অনেক কষ্টে দিন কাটায়।

পরিচিত শুভাকাংখির কাছ থেকে রিনা বিসিডব্লিওএস এর খোজ পেয়ে জিবিভি ও ট্যাবু সেশন এ অংশগ্রহণ  করেছে।সে এখন প্রতিবাধ করতে শিখেছে। সে তার অধিকার  এর কথা বলতে শিখেছে। নতুন আশায় জীবন পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে।

হাবিবা

সংগঠক

বিসিডব্লিউএস

Updated: June 29, 2021 — 1:06 am

আঁধার সিদ কেটে সুখজানের আলোতে ফেরা

জীবন ও জীবিকার সন্ধানে স্বামীর সাথে শহরে আসে সুখজান ।

গাজীপুরের স্থানীয় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে এ চাকু্রী  নেয়। সুখজান ও তার স্বামীর পরিশ্রমে কোনরকম  তাদের সংসার চলে যাচ্ছিলো।

২০২০ সালে হঠাৎ করেই সুখজানের জীবনে  কালো আঁধার নেমে আসে।  অফিস থেকে ফেরার পথে রাস্তা পার হবার  সময়  বেপরোয়া দ্রুতগামী একটি গাড়ী  ডান পায়ের উপর দিয়ে যায়, তার ডান পায়ের পাতা থেঁৎলে মারাত্বক জখম হয়।  একে তো মহামারী  করোনার থাবা, কারখানা থেকে বেতন দেই ৬৫ পারসেন্ট,  এই টাকা দিয়ে খুব কষ্ট করে সংসার চলছিল, তার উপর আবার  সুখজানের দূঘটনা।

টাকার অভাবে ঠিক মত চিকিৎসা  করাতে না পারায় পায়ে ইনফেকশন হয়। ডাক্তার তার পুরো পা বাচানোর জন্য পায়ের আঙ্গুল  কেটে ফেলে দেয়। শরীরের  অন্য  অংশ  থেকে মাংস  কেটে লাগানো হয় পায়ে।

 

সুখজানের চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল, চিকিৎসা করাতে তার স্বামীর ঘাড়ে  অনেক বড় ঋণের বোঝা।  ঔষধ কেনার জন্য সংসারের বাজার করার সামর্থ্য ছিল না।

BCWS এর পক্ষ থেকে  করোনা কালীন সহায়তা  সুখজানের বাসায় পৌঁছে  দেয়।

BCWS পরিবার কে কাছে পেয়ে কেঁদে  ফেলে, “আফা আপনাগোমত মানুষ দেহি নাই ।  আপনারা আমার  বাসায় সাহায্যে  নিয়া আইছেন ছয় মাস ধরে বিছানায় পরে আছি। কেউ একটা টাকা  দেয়নি। কোন সরকারি  সাহায্যে  পাইনি। গরিবের কেউ নাইগো আফা, এইডা মনে মনে ভাবতাম। আপনারা যা দিছেন আমার একমাস বাজার করা লাগব না।  বাজারোর টাকা  দিয়ে ঔষধ  কিনতে পারমু। দুয়া করি আফনারা যেন মানুষের জইন্য অনেক কিছু করতে পারেন। আমার লাইগা দুয়া কইরেন গো আমি বালা হইয়া কামে ফিরুম।“

ধীরে ধীরে সুস্থ্য হয়ে সুখজান এখন কর্মক্ষম হয়েছে। সাবকন্ট্রাক্টে প্রোডাকশন এর কাজ করে সংসারের জন্য আয় করা শুরু করেছে। সুখজানের জন্য রইলো শুভ কামনা।

সুখজান

আহত নারীশ্রমিক

সম্পাদনা

হাবিবা

মানবাধিকার কর্মী

Updated: June 24, 2021 — 3:47 pm

শুন্য অনুভুতি নিয়ে জয়তুনের লড়াই

মনটা আজ তার ভীষণ খারাপ,চোখ- মুখ ফোলা।রাত ৩ টা পর্যন্ত নাইট ছিল।তারপরও আমাদের ফোন পেয়ে অফিসে আসছেন।

কি হইছে বলতেই গড় গড় করে কষ্ট গুলো বলতে শুরু করলেন।

 

“ আমার ২ মাস বয়সে মায়ে আরেক বেডার লগে ভাইগা গেছে। বাপে বিয়া করছে। আমারে দাদী পালছে, বুড়ী অনেক কষ্টে আমারে ৭ কেলাস পর্যন্ত পড়াইছে। হেরপর  ১৪ বছর বয়স হইলে বিয়াইত্তা ফোলামাইয়া আছে  এমন বেডার লগে বিয়া দিল। জামায় উঠতে বইতে নির্যাতন করে লগে খাউন পিন্দনের কষ্ট, উপায় না পাইয়া কাম নিলাম অনন্ত গার্মেন্টস এ।“, কন্ঠ যেন কেঁপে উঠলো, অশ্রুভেজা চোখে নিজের সবুজ ওড়নার দিকে তাকালো ৩৪ বছর বয়সী জইতুন।

কিছুক্ষন সময় নিয়ে নিজেকে সামলিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে আবার শুরু করলো-

“মাস না শেষ হতেই জামাই বেতনের টেকা চায়, বেডায় তাকার লেইগা পাগল হইয়া যায়, মাঝে মইধ্যে মারে, বেতন হাতে পাওনের লগে লগেই তারে টেকা দিয়া দিতাম। দাদীরেও দেওন লাগে, হে থাকে ফুফুর ঘরে। বুড়ী আমারে সোনার ডিম দেওন হাঁস মনে করে, টেকা ছাড়া কোন কতা নাই।“  -বড় একটা নিঃশ্বাস ফেললো।

“এমনেই চইলা গেলো অনেক দিন। পোলা একটা হইলো। কষ্ট কমলো না। পোলারে আরেক বাসায় রাইখা কামে যায়তাম। ঐ বেডিরেও ২০০০ টেকা দেওন লাগতো। কয়টা টেকা জমাইয়া জমি কিনলাম, জামাই রেজিস্ট্রির সময় হের নামে কইরা লইছে।“- গলা যেন ভারী হয়ে আসলো জয়তুনের, ছটফট করে আবার বলা শুরু করলো।

“আইজ ১০ মাস হইলো পোলাডারে গ্রামে লইয়া গেসে জামাই, আমি খুজ না নিলে জামাই এর কোন খবর পাওন যায় না। শর্ত  একটায়, মাসে ১০০০০ টেকা দেওন লাগবো নাইলে পোলার আশা বাদ। অহনে তো বাপে-মায়ে, জামাই, টাকা-পয়সা কিছুই নাই আমার।“

“আফা এখন আর কারও কথা মনে পড়ে না। এই চারডা হাত পাও  ছাড়া কেও আর আমার আপন না।” – অনেক চেষ্টা করেও চোখের পানি আটকাতে পারলনা।

“আমি শূন্য।“

জয়তুনের মনের কষ্ট চোখের পানি হয়ে বের হচ্ছে। করুন চোখে তাকিয়ে রইলো জানালার দিকে।

“আফা, আপনেগো BCWS এ কম্পুটার, শ্রম আইন টেরনিং লইয়া আরও বড় জায়গায় কাম করুম।”

জয়তুন,

নারী শ্রমিক

জইতুনের মতো হাজারো নারী শ্রমিকের কষ্টের সঙ্গী হয়ে  তাদের কল্যানে কাজ করে যাচ্ছে BCWS।

সম্পাদনা

শিমুল

গাজিপুর সেন্টার

বিসিডব্লিউএস

Updated: June 29, 2021 — 11:46 pm
”শ্রমিক বান্ধব ব্লগ” © 2018