”শ্রমিক বান্ধব ব্লগ”

Bangladesh Center for Workers’ Solidarity

Category: শ্রমিকের লড়াই ও সফলতার গল্প

রোদ- ঝড়- বৃষ্টি যাই হোক উৎপাদনের চাকা চলমান রাখতে গার্মেন্টসে শ্রমিকের জীবন যুদ্ধ থেমে থাকে না।

আজ ১লা জুন মঙ্গলবার সকাল ৬টা রাহেলা ঘুম থেকে উঠে ভাত তরকারি রান্না করল। কাজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে গোসলটা সেরে নিল। তখন আকাশে কালো মেঘ জমাট বাঁধতে শুরু করেছে।হঠাৎ মুষল ধারে বৃষ্টি । কারখানায় যাবার জন্য রাহেলা তার নড়বড়ে পুরানো ছাতা বের করল।  এমন সময় তার ৬ বছরের মেয়ে রানু বলে উঠল-“এত বৃষ্টি মা তুমি তো ভিজা যাইবা, আজকে কামে যাইও না মা। রাহেলা বলল “নারে মা, তর মা কামে  না গেলে ফ্যাক্টরী চলবো আর দেশ-ই বা আগাইব কেমনে,আমরাই বা খামু কেমনে !!!” তারপর কোনমতে ভাঙ্গা ছাতা মাথায় ধরে মুষল বৃষ্টিতে শরীর ভিজিয়ে রাস্তার হাটু পানিতে পা ভিজিয়ে, শিল্প-কারখানার উৎপাদন অব্যাহত রাখতে রাহেলার মত শত শত, হাজার হাজার শ্রমিকের কারখানা মুখী পদযাএা ।

এভাবেই-রোদ -ঝড়- বৃষ্টি যাই হোক উৎপাদনের চাকাকে অব্যাহত রাখতে গার্মেন্টস শ্রমিকের জীবন যুদ্ধ চলতে থাকে। তাদের এই অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণেই শুধুমাত্র পোশাক খাত একাই জাতীয় রপ্তানি আয়ে প্রায় ৮৪ শতাংশ অবদান রেখে চলছে।। এগিয়ে নিচ্ছে আমাদের অর্থনীতিকে । অদম্য এই শ্রমিকের কারনেই আমরা উন্নয়নশীল রাষ্ট্র থেকে উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখছি। মনের গভীর থেকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা রইল রাহেলার মত হার না মানা অদম্য সকল পোশাক শ্রমিকদের প্রতি।

মোঃ ইউনুস সরদার

মানবাধিকার কর্মী

নারায়ানগঞ্জ

Updated: June 1, 2021 — 5:25 pm

BCWS থেকে কম্পিউটার প্রশিক্ষন নিয়ে মহসিনের দিন বদলের কথা

নিম্ন  মধ্যধিত্ত পরিবার থেকে ওঠে আসা, মার্কেটিং এম .বি .এ  পাশ করা ছেলে মহসিন, অনিচ্ছাকৃত হলেও পরিবারের স্বচ্ছলতার জন্য স্থানীয় শিল্প-কারখানা রূপা ফেব্রিক্স এ কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর  পদে চাকুরী নেন। কিন্তু চাকুরী করতে এসে কারখানার ভেতরের বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা ও সবার সাথে  অশালীন ব্যবহারে দিশেহারা হয়ে যান ।  কিন্তু নিরুপায় ! চাকুরী না করলে সংসার যে  চলবে না । নিজের বাবা-মা ছোট বোনের  লেখাপড়া । এর মাঝেই কেটে গেল ৩ টি বছর।  নিজের সংসার হলো, কিন্তু ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হলো না । পরিবারের চাহিদা মিটাতে সব কিছু সহ্য করে চাকুরী করতে নিয়মিত চালিয়ে গেলেন।

হঠাৎ একদিন  পাশের সহকর্মীর কাছে জানতে পেরেছিলেন বিসিডব্লিউএস এর কথা, যেখানে বিনা মূল্যে কম্পিউটার এর পেশাগত প্রশিক্ষন দিয়ে দক্ষ কর্মী গড়ে তোলা হয়।

মহসিন আত্ত্ববিশ্বাসী ছিলেন, ছিলনা শুধু সুযোগ । বিসিডব্লিওএস ছিল সেই সুযোগের ক্ষেত্র । চাকুরীর পাশাপাশি বিসিডব্লিউএস এর উন্নত কম্পিউটার প্রশিক্ষন নিতে থাকলেন ।  bdjobs.com এ একাউন্ট খুলে কিভাবে চাকুরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করা যায় তা শিখে ফেললেন এবং সুযোগ খুঁজছিলেন কিভাবে নিজেকে  আর ও উন্নত  কর্ম পরিবেশে নেয়া যায় ।

অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো । একটি  বেসরকারী  শীপিং  অফিস এ  নিয়োগ পান, সেখানে কম্পিউটারে  দক্ষতা আছে এমন লোক প্রয়োজন ছিল। মহসিন ও তার পরিবার বিসিডব্লিওএস এর কাছে কৃতজ্ঞ।

মহসিন এর উক্তিঃ   বিসিডব্লিওএস আমাদের মত দরিদ্রের  অন্ধের লাঠি ।

শিমুল

সেন্টার কো-অর্ডিনেটর

বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কারস সলিডারিটি

Updated: May 23, 2021 — 5:01 pm

কল্পনা বেগমের অধিকার আদায়।

কল্পনা বেগম ৫ম শ্রেণী পাস ২ সন্তানের মাতা। বয়স প্রায় ৩৭ বছর। স্বামী নারায়ণগঞ্জের একটি কারখানায় চাকুরী করেন। সন্তানদের ভালোভাবে মানুষ করার জন্য এবং স্বচ্ছল ভাবে জীবন যাপন করার জন্য নিজেও কোনাবাড়ী আমবাগ এলাকায় পিএন কম্পোজিট কারখানায় চেকার হিসেবে ০১.০৯.২০১৩ইং তারিখে যোগদান করেন।

কল্পনা বেগম বিসিডাব্লিউএস- কোনাবাড়ী শাখার সাথে ২০১৫ সাল থেকে যুক্ত হয়ে জানতে পারেন শ্রম আইনের সার্ভিস বেনিফিটের কথা এবং সেই সাথে জানতে পারেন শ্রম আইনের বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয়ে।

কল্পনা বেগম বিসিডাব্লিউএস এর সাথে যুক্ত হবার আগে জানতেন, বাংলাদেশের যে কোন কারখানায় বেতন এবং ওভারটাইম ব্যতীত অন্য কোন ধরনের টাকা দেওয়া হয় না।

হঠাৎ করে পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত সমস্যা হবার কারণে ০১.০৬.২০২০ইং তারিখে চাকুরী হতে অব্যাহতি এবং আইন অনুযায়ী পাওনাদি চেয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেন।

কারখানা কর্তৃপক্ষ তার সমস্যাগুলি যৌক্তিক বিবেচনা করে অব্যাহতিপত্র গ্রহণ করেন কিন্তু আইনগত পাওনা পরিশোধের ব্যাপারে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন এবং কারখানার বিভিন্ন প্রক্রিয়ার কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেন।

কল্পনা বেগম সরাসরি কারখানার কর্তৃপক্ষকে বলেন- আইন অনুযায়ী ১৬৪৮০ টাকা পাওয়া আমার আইনগত অধিকার। আপনারা যদি আমার এই টাকা না দেন তাহলে আমি টাকা আদায় করার জন্য যেখানে যাবার সেখানেই যাব।

অবশেষে, ৩১.০৭.২০২১ইং তারিখে কল্পনা বেগম শেষ কর্মদিবসে কারখানা কর্তৃপক্ষ বেতন, ওভারটাইমের টাকা ছাড়াও আইন অনুযায়ী ১৬৪৮০ টাকা পরিশোধ করে থাকে।

এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে, কল্পনা বেগম নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকার কারণে। আর এই সচেতনতা তৈরী হয়েছে বিসিডাব্লিউএস এর বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে।

কল্পনা বেগম এখনও বিসিডাব্লিউওস এর সাথে যুক্ত রয়েছেন  এবং আশেপাশের কারখানার শ্রমিকদের আইনগত পাওনা টাকার বিষয়ে পরামর্শ দেন।এভাবেই কল্পনা বেগম নিজের অধিকার এবং অন্যান্য কারখানার শ্রমিকদের জন্য পরামর্শ দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

নওশাদ রায়হান

বিসিডাব্লিউএস-কোনাবাড়ী

Updated: May 21, 2021 — 9:31 pm
”শ্রমিক বান্ধব ব্লগ” © 2018