”শ্রমিক বান্ধব ব্লগ”

Bangladesh Center for Workers’ Solidarity

বাড়িভাড়া বৃদ্ধি যখন শ্রমিকের জন্য বাড়তি চাপ!

ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

বাসস্থান মানুষের মৌলিক প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত। জীবিকা ও উপার্জনের তাগিদে গ্রাম গঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে  মানুষ এখন শিল্পাঞ্চলমুখী। তাই প্রয়োজন হয়েছে বিপুলসংখ্যক বাসস্থানের। জীবনের এই অপরিহার্য প্রয়োজন পূরণের তাগিদে শিল্পাঞ্চলগুলোতে গড়ে উঠছে ছোটছোট বাসাবাড়ি বা কলোনী। বসবাস বা ব্যবসার প্রয়োজনে বাড়ি ভাড়া দেয়া-নেয়া নতুন কোনো বিষয় নয়। এটি যুগ যুগ ধরে চলমান ব্যবস্থা। ভাড়া বাসায় সারাটা জীবন পার করে দিচ্ছে এমন শ্রমিকের সংখ্যাও অনেক।

নতুন বছরের ‘শুভেচ্ছা’ হিসেবে বাড়িওয়ালাদের কাছ থেকে ভাড়া বাড়ানোর মৌখিক নোটিশ পেয়েছেন শিল্পাঞ্চলে কর্মরত শ্রমিক নামক প্রত্যেক ভাড়াটিয়ারা। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই জানিয়ে দেওয়া হয় ১লা জানুয়ারি থেকে বাড়তি ভাড়া গুণতে হবে। এলাকাভেদে এ বৃদ্ধির হার ভিন্নতা থকলেও বসবাসরত শিল্পাঞ্চলে  মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রমিকদের  বাড়িভাড়া বেড়েছে মাসে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বা তারও বেশী।

নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া, গৃহনির্মাণ ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি, দফায় দফায় বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বৃদ্ধি, হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি, সিটি ট্যাক্স বৃদ্ধি ইত্যাদিকে পুঁজি করে বাড়িওয়ালারা বাড়িভাড়া বাড়াচ্ছেন। আসলে বাড়িওয়ালারা বাড়তি আয়ের আশায় বছরের শুরুতেই বাড়িভাড়া বাড়ানোর নানা ফন্দি আঁটতে থাকেন। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস এলেই ভাড়াটিয়াদের ভাড়া বাড়ানোর নোটিশ দেন  মৌখিকভাবে। ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনারও প্রয়োজন মনে করেন না তাঁরা।

শ্রমিকদের বসবাসরত  গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে বাসাবাড়ির ক্ষেত্রে ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে ০১ মাস থেকে ০২ মাসের টাকা অগ্রিমও নেওয়া হয়। বাড়িওয়ালারা ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে বাড়িভাড়া সংক্রান্ত কোনো চুক্তি করে না। ভাড়া নেওয়ার ছাপানো রশিদও দেয় না। বাসা ছেড়ে দিতে যে পরিমাণ সময় দেওয়ার কথা তা নোটিশের মাধ্যমে জানান না। সবকিছুই হয় মৌখিকভাবে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাড়িওয়ালারা স্থানীয় হওয়ায় তাদের দাপটের কাছে অসহায় থাকেন শ্রমিক নামক ভাড়াটিয়ারা। বাড়িওয়ালাদের সাথে কথা বলতে ভয় পাওয়া, উপযুক্ত বাসা খুঁজে না পাওয়া,  ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া, বাসা পাল্টানোর ঝামেলা, বাসা পাল্টালে কর্মক্ষেত্রের দূরত্ব বেড়ে যাওয়া, একটি বাসা ছেড়ে দিলে ভাড়াটিয়া (শ্রমিকেরা) অন্যত্র তার সুবিধামতো এলাকায় বাসা ভাড়া নিতে গেলে আরো বেশি ভাড়া দেওয়া ইত্যাদি এড়াতে ভাড়াটিয়ারা বাড়িওয়ালাদের অত্যাচার বেআইনি পদক্ষেপ সহ্য করে নেন। বিরোধে জড়ালে লাঞ্ছিত হওয়ার ভয়ও থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাড়িওয়ালারা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয় ভাড়া বাড়বেই না পোষালে বাসা ছেড়ে দাও।  এ জন্য মেনে নিতে হয় বাড়িওয়ালার সব অন্যায়। 

শ্রমিকদের ওপর চেপে বসেছে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ঘোড়া। জীবন ধারণের উপযোগী প্রতিটি জিনিসের অগ্নিমূল্য। চাল-ডাল, মাছ-মাংস, তেল, তরিতরকারি, ফলমূল, চিনি-লবণ, আটা ইত্যাদি দ্রব্যের মূল্য আগের তুলনায় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তার সাথে যোগ হয়েছে বাড়তি বাড়িভাড়া । তাহলে প্রশ্ন হতে পারে বাড়িভাড়ার ব্যয় বৃদ্ধি নামক জটিল চক্র হতে  এই স্বল্প/অল্প শিক্ষিত খেঁটে খাওয়া শ্রমিকদের মুক্তির উপায় কি?

শিল্পাঞ্চলের প্রায় বেশীরভাগ শ্রমিক এবং বাড়িওয়ালারা জানেনা দেশের অন্যান্য বিষয়গুলির মত দেশে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রন-১৯৯১ নামক একটি আইন রয়েছে এই আইনের অধীনে একজন নিয়ন্ত্রক কমিশন রয়েছেন।   যদিও কোন বাড়িওয়ালারা এই আইন সম্পর্কে অবগত থাকলেও সরকারের কর ফাঁকি দেওয়া উদ্দেশ্যে বাড়িভাড়া সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ রাখেন না ।

বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৯১ এ বাড়িভাড়া সংক্রান্ত সমস্যা ও সমাধানের কথা বলা হয়েছে। আইনে সুনির্দিষ্ট বেশ কিছু বিষয় রয়েছে বাড়িভাড়া দেওয়া এবং নেওয়ার ক্ষেত্রে। বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াদের মধ্যে একটি লিখিত চুক্তিনামা থাকতে হবে যেখানে উভয়পক্ষের স্বাক্ষর থাকবে। এতে উল্লেখ্য থাকবে ভাড়ার মেয়াদ, বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াদের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, ভাড়ার পরিমাণ, বিদুৎ-গ্যাস বিলসহ আরও নানান প্রয়োজনীয় বিষয়।   

স্বল্প/ অল্প শিক্ষিত খেঁটে খাওয়া শ্রমিকদের বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৯১ সম্পর্কে সচেতন করে তোলা পাশাপাশি বাড়িওয়ালাদেরও আইন সম্পর্কে অবহিত করা এবং  কর ফাঁকি দেওয়ার শাস্তির বিধান তাদের নিকট উপস্থাপন করা ।

বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ কমিশন, স্থানীয় প্রশাসন, শ্রমিকদের সাথে জড়িত বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থাদের কার্যকরী ভূমিকাই হতে পারে যুগোপযোগী ব্যবস্থা।

নওশাদ রায়হান

বিসিডব্লিউএস- কোনাবাড়ী।

Updated: March 1, 2022 — 5:39 pm

আর সহ্য হয় না ……….

গামের্ন্টস এ আর কাজ করতে মন চায় না । সারা দিন গালাগালি আর ভালো লাগে না । গালাগালির প্রতিবাদ করলে সুপারভাইজার দুই দিন ভালো থাকে । দুই দিন পর আবার খারাপ ব্যবহার শুরু করে ।

Updated: February 4, 2022 — 2:40 pm
”শ্রমিক বান্ধব ব্লগ” © 2018