মনটা আজ তার ভীষণ খারাপ,চোখ- মুখ ফোলা।রাত ৩ টা পর্যন্ত নাইট ছিল।তারপরও আমাদের ফোন পেয়ে অফিসে আসছেন।
কি হইছে বলতেই গড় গড় করে কষ্ট গুলো বলতে শুরু করলেন।
“ আমার ২ মাস বয়সে মায়ে আরেক বেডার লগে ভাইগা গেছে। বাপে বিয়া করছে। আমারে দাদী পালছে, বুড়ী অনেক কষ্টে আমারে ৭ কেলাস পর্যন্ত পড়াইছে। হেরপর ১৪ বছর বয়স হইলে বিয়াইত্তা ফোলামাইয়া আছে এমন বেডার লগে বিয়া দিল। জামায় উঠতে বইতে নির্যাতন করে লগে খাউন পিন্দনের কষ্ট, উপায় না পাইয়া কাম নিলাম অনন্ত গার্মেন্টস এ।“, কন্ঠ যেন কেঁপে উঠলো, অশ্রুভেজা চোখে নিজের সবুজ ওড়নার দিকে তাকালো ৩৪ বছর বয়সী জইতুন।
কিছুক্ষন সময় নিয়ে নিজেকে সামলিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে আবার শুরু করলো-
“মাস না শেষ হতেই জামাই বেতনের টেকা চায়, বেডায় তাকার লেইগা পাগল হইয়া যায়, মাঝে মইধ্যে মারে, বেতন হাতে পাওনের লগে লগেই তারে টেকা দিয়া দিতাম। দাদীরেও দেওন লাগে, হে থাকে ফুফুর ঘরে। বুড়ী আমারে সোনার ডিম দেওন হাঁস মনে করে, টেকা ছাড়া কোন কতা নাই।“ -বড় একটা নিঃশ্বাস ফেললো।
“এমনেই চইলা গেলো অনেক দিন। পোলা একটা হইলো। কষ্ট কমলো না। পোলারে আরেক বাসায় রাইখা কামে যায়তাম। ঐ বেডিরেও ২০০০ টেকা দেওন লাগতো। কয়টা টেকা জমাইয়া জমি কিনলাম, জামাই রেজিস্ট্রির সময় হের নামে কইরা লইছে।“- গলা যেন ভারী হয়ে আসলো জয়তুনের, ছটফট করে আবার বলা শুরু করলো।
“আইজ ১০ মাস হইলো পোলাডারে গ্রামে লইয়া গেসে জামাই, আমি খুজ না নিলে জামাই এর কোন খবর পাওন যায় না। শর্ত একটায়, মাসে ১০০০০ টেকা দেওন লাগবো নাইলে পোলার আশা বাদ। অহনে তো বাপে-মায়ে, জামাই, টাকা-পয়সা কিছুই নাই আমার।“
“আফা এখন আর কারও কথা মনে পড়ে না। এই চারডা হাত পাও ছাড়া কেও আর আমার আপন না।” – অনেক চেষ্টা করেও চোখের পানি আটকাতে পারলনা।
“আমি শূন্য।“
জয়তুনের মনের কষ্ট চোখের পানি হয়ে বের হচ্ছে। করুন চোখে তাকিয়ে রইলো জানালার দিকে।
“আফা, আপনেগো BCWS এ কম্পুটার, শ্রম আইন টেরনিং লইয়া আরও বড় জায়গায় কাম করুম।”
জয়তুন,
নারী শ্রমিক
জইতুনের মতো হাজারো নারী শ্রমিকের কষ্টের সঙ্গী হয়ে তাদের কল্যানে কাজ করে যাচ্ছে BCWS।
সম্পাদনা
শিমুল
গাজিপুর সেন্টার
বিসিডব্লিউএস