”শ্রমিক বান্ধব ব্লগ”

Bangladesh Center for Workers’ Solidarity

স্বামীর নির্যাতনের বিরুদ্ধে আশুরা বেগমের সাহসী পদক্ষেপ

মোসাঃ আশুরা বেগম, বয়স ৩৮ বছর, ২ সন্তানের মাতা। দেশের বাড়ী পাবনা, বর্তমানে আমবাগ কমিউনিটিতে লাইজু ট্রেইনিং সেন্টারে গার্মেন্টস বিষয়ক কাজ শিখছেন।

আশুরা বেগমের ২০ বছর আগে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। ২০ বছরের সংসারে তাদের ০১ ছেলে এবং ০১ মেয়ে রয়েছে।সংসারের প্রয়োজনে ছেলে-মেয়ে এবং আশুরা বেগমকে দেশের বাড়ীতে রেখে  তার স্বামী কোনাবাড়ী তুষকা গার্মেন্টস এ চাকুরী করতেন। ভালই চলছিল তাদের সংসার।

আশুরা বেগম লক্ষ্য করতে থাকেন- তার স্বামী আগের মত তাদের খোঁজ খবর নেয় না, সংসারের খরচ বহন করে না, ফোন দিলে মাঝে মাঝে তাদের কথা হয়, ছুটির সময় বাড়ীতেও আসে না। আশুরা বেগম খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তার স্বামী আরেকটি বিয়ে করেছেন। আশুরা বেগম তার স্বামীর সাথে যোগাযোগ করে বিয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তাকে অনেক গালাগালি করেন এবং তালাক দেওয়ার হুমকি দিয়ে থাকেন। স্বামীর কাছ থেকে এসব কথা শুনার পর আশুরা বেগমের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরার মত অবস্থা হয়।

গ্রামের বাড়ীতে ছেলে মেয়েকে নিয়ে সংসারের ব্যয় মিটাতে না পেরে এবং তার স্বামীকে ফিরে পেতে ০২ মাস আগে কোনাবাড়ী, আমবাগে বোনের বাসায় আশ্রয় নেন।

 

আশুরা বেগমের এমন সমস্যার কথা শুনে লাইজু ট্রেইনিং সেন্টার থেকে তাকে বলা হয় বিসিডাব্লিউএস– কোনাবাড়ী সেন্টারের সাথে যোগাযোগ করার জন্য।

আশুরা বেগম বিসিডাব্লিউএস কোনাবাড়ী সেন্টারের সাথে যোগাযোগ করে সমস্ত ঘটনাবলি খুলে বলেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ কামনা করেন। আশুরা বেগমের সমস্ত ঘটনা শোনার পর পরামর্শ হিসেবে- জরুরী খাদ্য সহায়তার জন্য ৩৩৩ নাম্বারে ফোন দেওয়া, স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ বা নির্যাতনের সম্মুখীন হলে থানায় অভিযোগ করা/  ৯৯৯ নাম্বারে ফোন দেওয়া এবং  নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিসিডাব্লিউএস এর অবস্থান তুলে ধরা হয়।

 

পরবর্তীতে, তার স্বামী ছেলে-মেয়েদের মায়ায় আশুরা বেগমের সাথে দেখা করতে আসলে, আশুরা বেগম সংসারের ভরণপোষণ এর টাকা এবং  না জানিয়ে বিয়ে করার কথা জিজ্ঞেস করতেই তার স্বামী অকথ্য ভাষায় গালাগালি এবং গায়ে হাত তুলে থাকেন। আশুরা বেগম সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিবাদ করে তার স্বামীকে বলেনঃ আরেকবার গায়ে হাত তুললে ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে পুলিশ আনবো এবং বিসিডাব্লিউএস এর মাধ্যমে থানায় মামলা করবো।

আশুরা বেগমের কাছ থেকে এমন প্রতিবাদী কথা শুনে তার স্বামী ভয় পেয়ে যান। ভয় পেয়ে তার স্বামী আশুরা বেগমকে বলেন- কোথাও অভিযোগ করার দরকার নাই , এই নাও  টাকা সামনের মাস থেকে আমি নিয়মিত মাসের টাকা পৌঁছে দিয়ে যাব।

মরিয়ম আক্তার

সংগঠক, বিসিডাব্লিউএস, কোনাবাড়ী।

Updated: May 28, 2021 — 3:50 pm

এ্যাকর্ড আমাদের জন্য হুমকি নয়, এ্যাকর্ড আমাদের আর্শীবাদ।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের ঘটনা ঘটে। সাভারের সেই ভবন ধসের দুর্ঘটনায় চাপা পরে প্রান হারান হাজারো শ্রমিক। দিনটির ভয়াবহতার কথা স্মরণ হলে আঁতকে উঠে সারা বিশ্ব। আর ওই দুর্ঘটনায় সারা বিশ্বের নজর এসে পরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের উপর। এই ঘটনার পর বদলে যেতে  শুরু করে বাংলাদেশের পোশাক খাতের কর্ম পরিবেশ এবং শুরু হয় পোশাক খাতের সংস্কার কাজ।

ক্রেতাদের আন্তর্জাতিক দুটি সংগঠনঃ এ্যাকর্ড ( ইউরোপের ক্রেতাদের জোট- এ্যাকর্ড অন ফায়ার এন্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ) ও এ্যালায়েন্স ( উত্তর আমেরিকার ক্রেতা জোট- এ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটি) এবং বাংলাদেশের বুয়েটের একটি টিম নিয়ে শুরু করা হয় পোশাক খাতের সংস্কার কাজ। এই টিমটি পোশাক শিল্পের কর্ম পরিবেশের উন্নতি ও শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করনে ( ভবন কাঠামো, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা) ২০১৮ সাল পর্যন্ত কাজ করে ২৫৫৯ টি কারখানার সংস্কার কাজ চালিয়ে থাকে।

ইতিমধ্যে এ্যাকর্ড এবং এ্যালাইন্স এর কার্যক্রমকে মালিক ও সরকার পক্ষ হতে  বিতর্কিত আখ্যা দিয়ে, বাংলাদেশে এ্যাকর্ড এবং এ্যালায়েন্স এর আর প্রয়োজন নেই বলে, ২০১৮ সালে ক্রেতাজোটের মনোনীত প্রতিনিধিদের নিয়ে বাংলাদেশ সরকার, বিজিএমইএ, বুয়েট বিশেষজ্ঞদের স্বমন্বয়ে গঠন করা হয় রেমিডিয়েশন কো- অর্ডিন্রেশন সেল (আর সি সি) সংস্কার সমন্বয় সেল। যেটি স্বনির্ভর  প্রতিষ্ঠান হিসেবে তৈরি পোশাক খাতের মানউন্নয়নে এ্যাকর্ড ও এ্যালায়েন্স এর পরিপূরক হিসেবে ১৫৪৯ টি কারখানার সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে যাত্রা শুরু করে এবং বিলুপ্তি ঘটে এ্যাকর্ড ও এ্যালায়েন্স নামক সংগঠনের।

 আর সি সি এর উপর দেশী বিদেশী প্রতিষ্ঠান গুলো আস্থা না রাখতে পারার কারণে, দেখা দেয় পোশাক খাতে নতুন সংকট। পোশাক খাতে চলমান সংকট কাটাতে ব্র্যান্ড, ট্রেড ইউনিয়ন, বিজিএমইএ নিয়ে গঠিত হয় আরএমজি সাস্টেইনেবলটি কাউন্সিল ( আর এস সি)।

এ্যাকর্ড চলে যাবার পরেও এই কাউন্সিল পোশাক কারখানাগুলোতে পরিদর্শন, প্রতিকার, প্রশিক্ষণ এবং নিরাপত্তা বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

এ্যাকর্ড/এ্যালায়েন্স/ আর সি সি/ আর এস সি  যেভাবেই বলিনা কেন-

এ্যাকর্ড বাংলাদেশে আসার পর কমপ্লাইন্স সেক্টর এর মূল্য বেড়েছে, কমপ্লাইন্স এর গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। কারখানার অবকাঠামোগুলো ঠিক হয়েছে, কাজের পরিবেশ পরিবর্তনগত ছোঁয়া পেয়েছে, অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থার উন্নয়ন, বৈদ্যুতিক সরঞ্জমাদি ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে, শ্রমিকেরা আইন অনুযায়ী তাদের পাওনা আদায় করে নিচ্ছে, মালিকেরা দায়বদ্ধতায় এসেছে,  শ্রমিকেরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে শ্রম আইন সম্পর্কে জানতে পারছে,   শ্রম আইনের বিভিন্ন ধারার প্রয়োগ ( পিসি কমিটি, সেফটি কমিটি) শুরু হতে থাকে সেই সাথে শ্রমিকেরা নিজেদের কথা বলতে শুরু করতে পেরেছে।

কিন্তু বিংশ শতাব্দীতে এসে আমাদের দেশে পোশাক শিল্প কোন দিকে যাচ্ছে- এটা ভেবে এ্যাকর্ডকে নিয়ে আমরা আলোচনা- সমালোচনা করে বিতর্ক করা এবং পোশাক শিল্প ধ্বংসের উপাধি দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

কিন্তু বাস্তবে কি এ্যাকর্ডের কারণে, এই শিল্প শেষ হয়ে যাচ্ছে…? ফ্যাক্টরী কেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এটার দায় কার…?  সরকার নাকি এ্যাকর্ড নাকি বায়ার…?

বাস্তবতা হচ্ছে,   এটার দায় সম্পূর্ন মালিকের। কেননা বায়ার এর কাছ থেকে অর্ডার নিয়ে যে পরিমান এলসি খোলার কথা, সেই পরিমান এলসি না খুলে তার থেকে তিনগুন বেশি এলসি খুলে যায় মালিক পক্ষ। ব্যাংক থেকে টাকা তুলে জমি, বাড়ী,  ফ্লাট এবং বিলাসিতা করে কাটিয়ে দেয়। এর পর ব্যাংক থেকে নিজের নামে  কোটিকোটি টাকা লোন নিয়ে ফ্যাক্টরীতে ব্যয় করে। ভুয়া এলসি খুলে ব্যাংকের কাছে দেনা হয়ে কারখানা বন্ধ হয়ে যায়।

আর কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায়- মালিক পক্ষ থেকে বিবৃতি আসে, সবকিছু ঠিক থাকার পরেও এ্যাকর্ড, ব্রান্ড এবং দেশীয় শ্রমিক সংগঠনের অযোক্তিক চাহিদার কারণে তারা কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। মালিক পক্ষের এই বিবৃতি মোটেও সত্যি নয়।

এ্যাকর্ডের কার্যক্রম কি বাংলাদেশের জন্য আরও প্রয়োজন..?

বাংলাদেশে এ্যাকর্ড এর পরিবর্তে আর এস সি কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে এ্যাকর্ড যেসকল কারখানায় চুক্তি করা বায়ারদের কাজ চলমান রয়েছে, সেসকল কারখানার শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। কারণ, বায়ারদেরও এখানে দায়বদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বায়াররা এ্যাকর্ডের চুক্তির মেয়াদ বর্ধিত না করলে, বায়ারদের এই দায়বদ্ধতা থাকবে না। এক্ষেত্রে আমাদের আবার শুরু করতে হবে শূন্য থেকে। শ্রমিকের নিরাপত্তার দায়িত্ব যেমন কারখানার মালিক এবং সরকারের ঠিক তেমনি বায়াদেরও রয়েছে।

মোটকথা- এ্যাকর্ড আমাদের জন্য হুমকি নয়, এ্যাকর্ড আমাদের আর্শীবাদ।

 

নওশাদ রায়হান

বিসিডাব্লিউএস- কোনাবাড়ী।

Updated: May 24, 2021 — 11:35 am

কম্পিউটার ব্যবহার জানব, নিজের কর্মসংস্থান নিজেই করব!

বর্তমান বিশ্ব তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্ব। অবাধ তথ্য অধিকার এবং প্রযুক্তি ভিত্তিক কম্পিউটার প্রশিক্ষণ আত্মনির্ভরশীল, সমৃদ্ধ জাতি গঠনে সহায়ক। প্রতিযোগীতামূলক বিভিন্ন চাকরীর বাজারে কম্পিউটার শিক্ষা বিশেষ যোগ্যতা বলে বিবেচনা করায় শিক্ষিত যুব সমাজ এবং গার্মেন্টস শ্রমিকদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আইটি দক্ষতা লাভ করে চাকুরীর ক্ষেত্রে সফলতা বয়ে নিয়ে আসছে।

বিশ্ব যেখানে তথ্য ও প্রযুক্তি জ্ঞানে বলিয়ান সেখানে বাংলাদেশর গার্মেন্টস শ্রমিক এবং কমিউনিটির জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্য, বিসিডাব্লিউএস এর উদ্যোগে ফ্রী কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞানে দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে।

 

মোঃ সাকিব, এসএসসি পাশ করেছে নজর দিঘী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। পিতা- সামাদ মোল্লা, ট্রাক ড্রাইভার এবং মাতা- শামীমা বেগম, গৃহিণী।

মোঃ সাকিব, কমিউনিটির নজর দিঘী স্কুলের শিক্ষক তুষ্ট কুমারের মাধ্যমে জানতে পারেন- বিসিডাব্লিউএস, কোনাবাড়ি সেন্টারে ০৩ মাস মেয়াদের ভিত্তিতে কম্পিউটার কোর্স ফ্রিতে শিখানো হচ্ছে। যেখানে অন্যান্য কম্পিউটার ট্রেইনিং সেন্টারে ০৩ মাসের কোর্স করতে গেলে ৫০০০টাকার প্রয়োজন হয়, সেখানে  বিসিডাব্লিউএস একেবারে ফ্রীতে কোর্সটি সম্পন্ন করে দিচ্ছে। এই আগ্রহ বসেই মোঃ সাকিব ১৩.১০.২০২০ইং তারিখ হতে, বিসিডাব্লিউএস কোনাবাড়ী সেন্টারে নিয়মিত ভাবে কম্পিউটার ট্রেইনিং শুরু করে।

মাত্র ০২ মাসের মধ্যই মো; সাকিব, কম্পিউটার বেসিক জ্ঞান, এমএস ওয়ার্ড এর বাংলা ও ইংরেজী টাইপিং অন্যদের চাইতে ভালভাবে রপ্ত করে ফেলে। এই সামান্য চেষ্টা এবং অভিজ্ঞতায় সে, কমিউনিটির  বোর্ডঘর এলাকায় রায়হান কম্পিউটার নামক প্রতিষ্ঠানে মাসিক ৩০০০ টাকা বেতনে পার্ট টাইম হিসেবে চাকুরীতে যোগদান করে।

চাকুরীতে যোগদান করার পর, মো সাকিব- বিসিডাব্লিউএস কোনাবাড়ী সেন্টারে এসে জানায়, এতদিন নিজের হাত খরচের জন্য আব্বার কাছ থেকে চেয়ে নিতে হত এবং অনেক কথা শুনতে হত। এখন এই মাসিক ৩০০০ টাকায় আমার হাত খরচ অনায়াসে চলে যাবে।

নওশাদ রায়হান

বিসিডাব্লিউএস- কোনাবাড়ী।

web: http://www.bcwsbd.org/

Updated: May 23, 2021 — 2:12 pm
”শ্রমিক বান্ধব ব্লগ” © 2018